শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দক্ষিন তন্তর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ভাতিজাকে গর্তে পুতে রাখার ঘটনা নিয়ে ধুম্র্যজালের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ভাতিজা নুর ইসলামের বিরোদ্ধে চাচা আলিমুদ্দিন পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
ভাতিজাকে গর্তে পুতে রাখার ঘটনাটি ২৬ মার্চ দুপুরে ফেসবুকে ভাইরাল হলে মিডিয়ায় এ নিয়ে সংবাদ হয়। পরে বিষয়টির আসল রহস্য উদঘাটনে পুলিশ অধিকতর তদন্তে মাঠে নামে। আশপাশের প্রতিবেশি ও উভয় পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে তদন্তে মাটির গর্তে পুতে রাখার বিষয়টির সন্দেহজনক ও ধু¤্রজাল পরিলক্ষিত হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও উভয় পরিবার সূত্র জানায়, শনিবার (২৬ মার্চ) বিকেলে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তন্তর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আপন বড় ভাইয়ের ছেলে (ভাতিজা) নূর ইসলামের (৩৫) এর দুই হাত পেছনে বাঁধা বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখার একটি ভিডিও প্রকাশ হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ভাতিজা নূর ইসলামকে উদ্ধার করে এবং এ ঘটনায় চাচা আলিমুদ্দিন, চাচী মুনিরা বেগম ও চাচতো ভাই মুক্তার হোসেনসহ ৩জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ওই দিনই পুলিশ তাদের কোর্টে প্রেরন করে। পরে আদালত চাচা আলিমুদ্দিন ও চাচী মুনিরা বেগম কে জামিন দেয়। এদিকে একই ঘটনায় আলিমুদ্দিনের ছেলে মুক্তার হোসেনের সাথে ভাতিজা নুর ইসলামের মেয়ের জামাইয়ের সাথে হাতাহাতি ও মারামারি হয়।
এলাকাবাসী, আহম্মদ আলী ৫৫), হামিদুল ইসলাম (৪৫), আয়নাল হক (৩০), আঃ রাজ্জাক (৫০), নুরুল ইসলাম (৪০), হাফিজুল হক (৪০), জিয়াউল হক জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ তাদের দীর্ঘ দিনের। তবে ওই দিনের মাটির গর্তে পুতে রাখার যে দৃশ্য এরকম কোন ঘটনা ওই মুহুর্তে তারা কেউ দেখেননি এবং আশাপাশের প্রতিবেশি কেউই তা জানে না। কেউ কোন হই হুল্লুরও করেনি। এগুলি একে অপরকে পরাজয় ঘটাননোর জন্য সাজানো একটা নাটক মাত্র।
নুর ইসলাম বলেন, জমি সংক্রান্ত ঘটনা আমাদের পূর্ব হতেই আছে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
আলিমুদ্দিন বলেন, আমার সাথে আমার ভাতিজার জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে এটা সত্য। কিন্তু এত বড় মিথ্যা সাজানো নাটক সে করবে এটা আমরা কেউ ভাবতে পারিনি। আশাপাশে তো আরো মানুষজন থাকে। কেউ কোন শব্দ শুনবে না। উদ্দেশ্য খারাপ থাকলে কোদলের কোপ কি তার বাড়ীর উঠানে এত সুন্দর হবে? কোদালের কোপ তো এলোমেলো হওয়ার কথা। এত অল্প সময়ে গর্ত বানিয়ে রাখা যায় কি? সেখানে তার মাপে সে বসতে পারে। আমি বৃদ্ধ মানুষ। দিনের বেলা ভাতিজাকে তার বাড়ীতে গিয়ে আমি মাটিতে পুতে রাখব এটা কিভাবে সম্ভব? উপড়ে আল্লাহ একজন আছে। বিচারের ভার তার কাছে দিয়ে দিলাম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, এই ঘটনাটি কয়েক বার সরেজমিন তদন্ত করে এলাকা ও আশাপাশের লোকজনের সাথে কথা বললে তারা গর্তে বুক পর্যন্ত পুতে ফেলার বিষয়টি ওই সময় কেউই জানেন না। পরে খবর পেয়ে লোকজন আসা শুরু করে। গর্তের আকার আকৃতি ও উঠানের পরিবেশ বৈশিষ্ট দেখে একজন মানুষ পুতে রাখার অবস্থা সেখানে নেই। বুক পরিমান মাটিতে থাকলেও হাত উপড়ে ছিল। তবে যে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে সেখানে বসে থাকতে পারবে। আর সেখানে তাকে শাররীক ভাবে কেউ নির্যাতন করেছে সে নিজেও বলেনি ও এটা ওই এলাকার প্রতিবেশি কেউ বলেনি।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বছির আহমেদ বাদল জানান, ঘটনাটির বিষয়ে আশপাশের প্রতিবেশিরা জানায় পূর্ব হতেই তাদের পারিবারিক জমি সংক্রান্ত ঝগড়া বিবাদ চলমান আছে। তবে ওই দিন নুর ইসলাম তার নিজ বাড়ীতেই ছিল। কিন্তু এমন ঘটনার বিষয়ে আশপাশের প্রতিবেশি কেউ তা বলতে পারে না। এ ব্যাপারে বিষয়টি রহস্যজনক ও ধু¤্র্যজালের সৃষ্টি হয়েছে।