জামালপুরের বকশীগঞ্জে পল্লীবিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন। একদিকে প্রচন্ড তাপদাহ অপরদিকে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভরা বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিজিএম জয় প্রকাশ নন্দী।
জানা যায়,বকশীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের আওতায় ১৩ টি ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে ৮৭ হাজার ৫শ। এর মধ্যে বানিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে ৪ হাজার,শিল্প গ্রাহক রয়েছে ২৬৩ জন,সেচ রয়েছে ১ হাজার ৪ শ ও আবাসিক গ্রাহক রয়েছে ৮১ হাজার ৮ শ। গত প্রায় সাত দিন ধরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে গেছে কয়েকগুন। দিনরাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছেনা বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের ভয়াবহতা আরো করুণ। মেরুরচর,সাধুরপাড়া,বগারচর ও কামালপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাচ্ছেন গ্রাহকরা। মাঝে মধ্যে ১/২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও লোডশেডিং দেয়া হয় ৫/৬ ঘন্টা। বিশেষ করে ইফতার,সেহোরী ও নামাজের সময় লোডশেডিং বেশি হওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। অপরদিকে তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে বাসাবাড়িতে ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংসসহ যাবতীয় জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। স্কুল-কলেজ পড়-য়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা দারুণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিুদ্যৎ বিভ্রাটের কারণে সময় মতো বোরো ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। এতে করে বোরো চাষে দারুণ ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
বকশীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানাগেছে,বকশীগঞ্জ জোনাল অফিসের আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে গ্রীড থেকে ৫ থেকে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ নয়টি ফিডারে ভাগ করে দেয়া হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় অনেক কম পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে।
মেরুরচর গ্রামের কৃষক আতিকুর রহমান বলেন,দিনে দুই একবার বিদ্যুৎ এলেও বেশিক্ষণ থাকে না। একবার চলে গেলে ৭/৮ ঘন্টার মধ্যে আর আসার খবর নেই।
বাগাডুবা এলাকার বাবুল মিয়া বলেন,বিদ্যুৎ থাকা না থাকা সমান কথা। রাতে দিনে ২ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাওয়া যায়না। বিশেষ করে ইফতার,তারাবী নামাজ ও সেহেরীর সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যায়না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
বগারচর গ্রামের কৃষক নান্ডা মিয়া বলেন,যে ভাবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে এতে সেচ নিয়ে মহা চিন্তায় আছি। লোডশেডিং যদি বন্ধ না হয় তাহলে বোরো চাষে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন কৃষকরা।
অপরদিকে শতভাগ বিদ্যুতের দেশে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বকশীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম জয় প্রকাশ নন্দীর বিরুদ্ধে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠে। গত মঙ্গলবার তড়িঘড়ি করে বিদ্যুৎতের লোশেডিংয়ের বিষয়ে সরকারের উপর দায় চাপিয়ে কথিত সংবাদ সম্মেলন করেন বকশীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জয় প্রকাশ নন্দী। সংবাদ সম্মেলনে জয় প্রকাশ নন্দী বলেন,এটা জাতীয় সমস্যা। এখানে আমার কি করার আছে। জ¦ালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় পাওয়ার স্টেশন গুলোতে চাহিদামত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে ময়মনসিংহ বিভাগে বিদ্যুতের লোড শেডিং চরম আকার ধারণ করেছে। গ্যাস ও জ¦ালানি সমস্যার সমাধান হলে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়বে। লোডশেডিং কমবে।
তিনি আরো বলেন,চাহিদার তুলনায় সরবরাহ পাচ্ছি অনেক কম। ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৫-৭ মেগাওয়াট। তাই বাধ্যহয়ে লোড শেডিং করতে হচ্ছে।