বরগুনার তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের ১ বছরের কমিটিতে ৪ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। সম্মেলন ছাড়াই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা ছাত্রলীগ। এই চার বছর অতিবাহিত হলেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি এখনো। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না থাকায় হতাশায় ভুগছেন পদপ্রত্যাশীরা।
জানা যায়, কোনোরকম সম্মেলন ছাড়াই গত ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক ও সম্পাদক তানভীর হোসাইন স্বাক্ষরিত ১৪ সদস্যের একটি আংশিক তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয়। এতে সরোয়ার হোসেন স্বপনকে সভাপতি ও মিনহাজুল আবেদিন মিঠুকে সম্পাদক করা হয়। স্বাক্ষরিত ওই কমিটির কাগজে কিছু লেখা ছিলো না যে কত দিনের ভিতরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। আজ চার বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয় বলে অভিযোগ রয়েছে বর্তমান সভাপতি সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দদের বিরুদ্ধে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হওয়ার পিছনে বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকের অবহেলা আছেন বলে জানান পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পূর্ণাঙ্গ কমিটির না হওয়ায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করা যায় না বলেও জানান তারা। এ ছাড়া ইউনিয়ন কমিটিও দিতে না পারার অভিযোগ রয়েছে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে।
এদিকে ঔ সময় কমিটি ঘোষণার পরপরই পদবঞ্চিতরা ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে সড়ক অবোধ করে আন্দোলন করেন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আশ্বাস দেন ঘোষিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুনভাবে কমিটির দেওয়া হবে। এরপরই আন্দোলন তুলে নেন সেই সময়কার পদবঞ্চিতরা আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া ঘোষিত ১৪ কমিটি সদস্যদের ভিতরে ৫ জনই বিবাহিত নেই ছাত্রত্ব। এছাড়াও প্রায় দিন দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটির দাবি করে পোস্ট দেওয়া হয়।
এদিকে উপজেলা ৭টি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। এতে ইউনিয়নে ছাত্রলীগ কর্মীরাও হতাশা রয়েছেন।
সেই সময়কালের ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতা রাইসুল আলম সাদ্দাম বলেন, চার বছর আগে ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই সময়ে কমিটি বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আমরা আন্দোলন করি। তবে কোনো ফলাফল হয়নি। গত চার বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারায় অবহেলা রয়েছে বর্তমান কমিটির সভাপতি সম্পাদকের। তিনি আরও বলেন এই কমিটি দলীয় কোনো প্রোগ্রামেও তেমন অংশগ্রহণ করে না। আমরা দ্রুত এই মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি করছি।
কমিটির সহসভাপতি ও সেই সময়েরকার কমিটি বিলুপ্তর দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম মেহেদী হাসান তপু বলেন, বর্তমান কমিটি গঠনে অনিয়ম হয়েছে। তখন কোনো সম্মেলন ছাড়াই কমিটি ঘোষণা করেন জেলা কমিটি। পরে এই কমিটি বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছি তখন জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছিল বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু ৪ বছর হয়ে গেছে কিছুই দেখেনি। তিনি আরো বলেন এই চার বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় অনেক ছাত্রলীগ কর্মী হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া বর্তমান কমিটি এই চার বছরে তেমন কোনো দলীয় প্রোগ্রাম করেনাই।দ্রুত কমিটি বিলুপ্ত করেন নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি করেন।
এ বিষয়ে বর্তমান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন মিঠু বলেন, আমাদের কমিটি ঘোষণার পর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি জেলা কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। হয়তোবা করোনা মহামারির কারণে এ কমিটি ঘোষণা হয়নি। এখানে আমাদের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের কোনো অবহেলা নেই।
বর্তমান কমিটির সভাপতি সরোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির কাগজ আমরা জেলা কমিটির কাছে জমা দিয়েছি। জেলা কমিটি তারা এখনও অনুমোদন দেয়নি। এখানে আমাদের কোনো গাফিলতি বা অবহেলা নেই।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বলেন, চার বছর আগে তালতলীতে আংশিক ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয় এরপর পরই তারা জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটির লিস্ট দিয়েছিল। তবে করোনার জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া যায় না। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীর সদস্যরা বরগুনায় বর্ধিত সভা করেছেন সেখানে বলা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে। আমরা কিছুদিনের ভিতরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে।
এই মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি কিভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনায় প্রায় তিন বছর কেটে গেছে। এজন্য আমরা তেমন কোন কাজ করতে পারি নাই যার কারণে সমস্যাটা হয়েছে।