কালীগঞ্জ-ঝিনাইদহ ঝিনাইদহ থেকে যশোরের চাঁচড়া পর্যন্ত ৪৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তায় ৬ লেনের করার কাজ শুরু হয়েছে। সড়কের প্রতি কিলোমিটার রাস্তার সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। এখন চলছে সড়কের দু'পাশের জমি অধিগ্রহন ও গাছ কাটার কাজ। ইতোমধ্যে রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় জমি মেপে লাল চিহ্ন দিয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সদস্যরা। এ সড়কটির কাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে নাগরিক জীবনে। তবে নিশ্চিহ্ন হবে ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতির স্মৃতিচিহ্ন শতবর্ষী রেইন্ট্রি গাছ গুলো।
নড়াইলে বসবাসরত জমিদার কালীবাবুর মা কয়েকশ বছর আগে ভারতের কাশিপুর তীর্থ যাত্রা করেন। পথে অতিরিক্ত রোদ্রতাপ থাকায় সে সময় তার মায়ের আদেশে জমিদার কালীবাবু ভারতের পাইকপাড়া থেকে নড়াইল, যশোর থেকে ঝিনাইদহ এবং ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় এই গাছ লাগান। এখনো এ সড়কের বিভিন্ন এলাকায় শত শত গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বর্তমানে এই গাছগুলো দেখভাল করেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা পরিষদ। কথা হয় ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের সচিব মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকারের সঙ্গে। তিনি জানান, ৬ লেনের রাস্তা বাস্তবায়নকারী প্রকল্প দপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল গাছগুলো অপসারণের জন্য। ইতোমধ্যে আমরা নিময় অনুযায়ী সব কাজ শেষ করে বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। অনুমতি পেলে নিয়ম মেনে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো কাটা হবে। তবে যেখানে এসব গাছ কাটার প্রয়োজন হবে না, সেখানে গাছ থাকবে।স্থানীয়রা জানায়, আমাদের জন্ম থেকে গাছগুলো এরকমই দেখছি। এসব গাছ রাস্তায় চলাচল করা হাজার হাজার মানুষের শীতল ছায়া দিয়ে আগলে রাখে। পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল। পরিবেশবান্ধব এই গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখে রাস্তা নির্মাণ করার দাবি তাদের। তবে এ গাছগুলো যে জনসাধারণের চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমনটিও নয়। এসব গাছে শুকনা ডাল পড়ে প্রায়ই পথচারী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। শুকনা ডাল পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
এ সড়কের সব থেকে বেশি গাছ রয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শহর ও এর আশপাশে। এসব গাছের জন্য রাস্তা ও রাস্তার পাশের এলাকা সব সময়ই সুশীতল থাকে। অন্যদিকে পাখিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গের নিরাপদ আবাসস্থল গাছগুলো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শত শত বছর ধরে এসব মহীরূহ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যা সিক্সলেনের কল্যাণে কাটা পড়ছে।
ঝিনাইদহের পরিবেশবিদ মাসুদ আহমেদ সনজু জানান, গাছগুলো বাঁচানো কোনো ওয়ে আমাদের নেই। আমরা শুধু জনসচেতনতা নিয়ে কাজ করি। যে সিক্সলেন হবে এটার জন্য অবশ্যই গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখে রাস্তার কাজ করা সম্ভব। উন্নত দেশে এসব গাছ বাঁচিয়ে রেখে রাস্তার কাজ করে কিন্তু আমাদের দেশের ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজ স্বার্থে কম মূল্যে বিক্রি করে টাকা আয়ের পাঁয়তারা করে। যে কারণে অনেক সময় অকারণে গাছগুলো কেটে ফেলার ব্যবস্থা করেন।
জাপান ভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্র্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন জানান, আমি যতটুকু জানি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতে কিছু এলাকায় এ ধরনের রেইন্ট্র্রি গাছ দেখা যায়। এ ছাড়া দেশের আর কোথায় এরকম বর্ষীয়ান গাছ দেখা যায় না। যে কারণে ভারতে পাইকপাড়া থেকে বাংলাদেশের কালীগঞ্জ এবং নড়াইল পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক রেইন্ট্রি গাছগুলো দু'দেশের সাংস্কৃতি বন্ধন হিসেবে মাথা উঁচু করে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া বর্তমানে বৈশ্বিক ঊঞ্চতার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম।