বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ইসলাম ধর্ম অবমাননা ও মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) কে কূটুক্তির অভিযোগে বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনায় আরও দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা গ্রেফতার করে পুলিশ। এই নিয়ে হামলা ও বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনায় ১৯জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এদিকে অনাকাঙ্খিত এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা কষ্ট বিরাজ করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন অনেক নিরহ মানুষ। তবে আতঙ্ক কেটেছে কৌশিকের পরিবারের। উপজেলা প্রশাসন থেকে মেরামত করা ঘরে বসবাস শুরু করেছেন কৌশিকের পরিবারের সদস্যরা।
অন্যদিকে হামলা ও ভাংচুরকারীদের দৃষ্টান্তমূল শাস্তির দাবিতে বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে বাগেরহাট শহরের সাধনার মোড় এলাকায় মানববন্ধন কর্মূসূচী পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও পূজা উদযাপন কমিটির ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে হিন্দু ধর্মীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, হিন্দু বৌধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শীব প্রসাদ ঘোষ,সহ-সভাপতি বাবুল সরদার, হিন্দু বৌধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মিলন ব্যানার্জি প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে কৌশিক যে অপরাধ করেছে তার বিচার আমরা চাই। সেই সাথে যারা আইন হাতে তুলে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাংচুর করেছে তাদেরকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ছাড়া হামলা ও ভাংচুরের পরে কৌশিকের ঘর মেরামত এবং ভাংচুরকারী সন্দেহে জড়িত ১৯জনকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান বক্তারা।
গতকাল রাতে গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা এলাকার মোঃ সিদ্দিক হাওলাদারের ছেলে মোঃ সাকিব হাওলাদার (২১) এবং একই এলাকার লাল মিয়ার ছেলে মোঃ সুমন শেখ (২০)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমরবুনিয়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, হামলা ও ভাংচুরের সাথে যারা জড়িত ছিলনা এমনও কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখনও আমাদের এলাকায় পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেক নিরহ মানুষ এলাকার বাইরে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া আমরা তো এমন ঘটনা চাইনি। সারাজীবন আমরা হিন্দু মুসলিম এক সাথে বসবাস করেছি, কোনদিন তো এমন ঘটনা ঘটেনি। আজ একটা ফেসবুক স্টাটাস নিয়ে এমন ঘটনা ঘটল এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা শানিত্তে বসবাস করতে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নং (আমরবুনিয়া) ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ মিরাজুল ইসলাম মিলন বলেন, আমরবুনিয়া এলাকার মানুষ সব সময় শান্তিপ্রিয়। এখানকার মানুষ কখনও হানাহানি পছন্দ করে না। ফেসবুকে স্টাটাস নিয়ে যা হয়েছে তাতে আমরা সবাই কষ্ট পেয়েছি। সোমবার রাতের পরে আমাদের এলাকা খুবই শান্ত রয়েছে। তবে সবার মনে একটা ভয় বিরাজ করছে। আমরা চাই পুলিশ প্রশাসন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হামলার সাথে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনুক। তবে কোন নিরহ নিরপরাধ লোক যাতে হয়রানির স্বীকার না হয় সে দাবিও করেন তিনি।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম বলেন,হামলা ভাংচুরের ঘটনায় আরও দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকা শান্ত রয়েছে। কোন প্রকার অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে আমরবুনিয়া এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষনিক বিষয়টি পর্যবেক্ষন করছি। আশাকরি আর কোন অঘটন এই বিষয় নিয়ে ঘটবে না।
ইসলাম ধর্ম ও বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)কে অবমাননা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অপরাধে সোমবার (১১ এপ্রিল) রাতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার আমরবুনিয়া গ্রামের কৌশিক বিশ্বাসের বাড়ি ভাংচুর করে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। কৌশিকের ভাংচুর করা ঘর মেরামত করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।