ঠিকাদারদের চাপে রেখে নান্দনিকতা নষ্টের দোহায় দিয়ে ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ কাজে প্রকল্প কার্যালয় হতে সরবরাহকৃত মালামাল দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্প কার্যালয় নির্ধারিত লোকবল দিয়েই এ কাজ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারসহ দায়িত্বশীলদের অবগত না করেই স্বেচ্ছাচারিভাবেই এ কাজ করার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প কার্যালয় নির্ধারিত এই লোকবলের বিরুদ্ধে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৪ জেলায় অসচ্ছল বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১শ’৫৭ ‘বীর নিবাস’ প্রকল্প কাজে এ অভিযোগ উঠেছে। নির্দেশনাটি প্রকল্প কার্যালয় হতে আসায় প্রকল্প পরিচালকের ভয়ে টু শব্দ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। সংশ্লিষ্টরা বলছে এটি দরপত্রের নিয়ম বহিঃর্ভূত। অবশ্য প্রকল্প পরিচালক বলছেন তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি পত্র নির্মাণাধীন এলাকায় দায়িত্বশীলদের কাছে দেওয়া হয়েছে (যার একটি কপি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত)।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্র জানায়, এলটিএম (লিমিটেড টেন্ডারিং মেথড-সীমিত দরপত্র) পদ্ধতিতে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলায় অসচ্ছল বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে দরপত্র আহবান করা হয়। যার দেখভাল করবে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস।
সেমোতাবেক অসচ্ছল বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১শ’৫৭টি বাড়ি (বীর নিবাস) নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মেনে ঠিকাদাররা কাজ পান। কিন্তু টেন্ডারের পরেই নির্মাণ সামগ্রির মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষতির আশংকায় রয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। এরমেধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপ-সহকারি প্রকৌশলী বিপুল (যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার দায়িত্বে) আবাসন নির্মাণ কাজের মধ্যে সাব-মার্সিবল পানির পাম্প বোরিং, মার্বেল পাথরে লেজার প্রিন্টের নির্মিত সাহসের প্রতিক বঙ্গবন্ধুর তর্জনি সমৃদ্ধ প্রতিকৃতি স্থাপন এবং আবাসনের বাইরে ওয়েদার কোট রং-এর কাজ প্রকল্প কার্যালয় হতে সরবরাহের কথা বলেন। একপ্রকার ঠিকারদারদের জিম্মি করেই এসব নির্মাণ উপকরণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ৮টি বীর নিবাস স্থলে সাব-মার্সিবল বোরিং করা হয়েছে। কিন্তু কারা,কিভাবে এবং কাদের তত্ত্বাবধানে করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কেউ অবগত নন। এমনকি সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদেরও জানার বাইরে।
খোঁজরখবর নিয়ে জানাযায়, প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৮ টাকা। বীর নিবাস নির্মাণ কাজের সাব-মার্সিবল বোরিং-এর এস্টিমেট (প্রাক্কলন ব্যয়) ৭৯ হাজার ৭৯ টাকা, মার্বেল পাথরে লেজার প্রিন্টের নির্মিত বঙ্গবন্ধুর তর্জনি সমৃদ্ধ প্রতিকৃতি স্থাপন ব্যয় ১৫ হাজার এবং আবাসনের বাইরে ওয়েদার কোট রং সংক্রান্ত এস্টিমেট (প্রাক্কলন ব্যয়) ৩০ হাজার টাকা। যার মূল্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের প্রকল্প কার্যালয় হতে সরবরাহকৃতদের প্রদান করতে হবে। অথচ দরপত্রে এ-সংক্রান্ত কোন কিছুই উল্লেখ ছিল না। দরপত্রের নিয়ম বহিঃর্ভূতভাবেই প্রকল্প কার্যালয় হতে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রকল্প কার্যালয়ের কথামত কাজ না করলে বিল আটকিয়ে দেওয়াসহ কাজে নানা প্রতিবন্ধকতারও হুমকি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বাধ্য হয়েই প্রকল্প কার্যালয়ের এ অন্যায় আবদার মেনে নিতে হচ্ছে ঠিকাদারদের। তারপরও কোন ঠিকাদারই মূর্খ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
বীর নিবাস নির্মাণ কাজের এসএম মনিরুজ্জামান নামে এক ঠিকাদার (মনিরামপুর) বলেন, বিভাগীয় উপসহকারি প্রকৌশলী বিপুল তাকে প্রকল্প কার্যালয় হতে কিছু মালামাল সরবরাহ করা হবে বলে জানান। এরপর থেকে তাকে অন্ধকারে রেখেই সাব-মার্সিবল বোরিং কাজ করা হয়েছে। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং বাইরের ওয়েদার কোটের রং করা হবে। এ অভিযোগ শুধু তার একার নয়; এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বীর নিবাস এলাকার ঠিকাদারদের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান জানান, তাকে শুধু তদারকির জন্য বলা হয়েছে। এর বাইরে কি হচ্ছে তিনি জানেন না।
পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) এসএম আবু আব্দুল্লাহ বায়েজিদ জানান, দরপত্র বহিঃর্ভূত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বাইরে রেখে কিভাবে এসব কাজ করা হচ্ছে তা তিনিও জানেননা।
অবশ্য বিভাগীয় প্রকৌশলী বিপুল রায়হান জানান, সেন্ট্রালি (কেন্দ্রীয়ভাবে) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এসব কাজ করা হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক বিষয় এই প্রকৌশলীও জানেন না, নির্মাণাধীন বীর নিবাস এলাকায় সাব-মার্সিবল বোরিং কারা করেছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রকৌশলী বলেন, এটি প্রকল্প কার্যালয় হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক এম ইদ্রিস সিদ্দিকী বলেন, এ ধরনের নির্দেশনা প্রকল্প কার্যালয় হতে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ভাল বলতে পারবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।