বাগেরহাটের শরণখোলায় কয়েক হাজার বিঘা পতিত জমিতে বোরো ধান চাষে বিপ্লব ঘটছে। গত বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১ হাজার বিঘা জমিতে বোরো চাষ হলেও এ বছর প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ হওয়ায় ব্যাপক সারা পড়েছে। ফলনো বাম্পার হওয়ায় চাষিদের চোখে মুখো ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। আসন্ন ঈদের আনন্দের মধ্য দিয়ে কৃষকদের কাঙ্খিত সোনার ফসল কাটা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, ৮০ দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ড শরনখোলা উপজেলাকে ঘিরে বেড়িবাধ নির্মান করে। পানি চলাচলে বিঘœ ঘটায় অধিকাংশ খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির অভাবে চাষিরা এক ফসলের উপর নির্ভর হয়ে পরে। বছরে শুধু একবার আমন ধানের চাষ করতো। ২০০৭ সালের ঘূর্নিঝড় সিডরের পর সরকার ও বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রশিক্ষনসহ নানা সহযোগিতার কারণে সারা বছর নিজেদের চাহিদা পুরন ও অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার লক্ষে বিভিন্ন ফসল ফলাতে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি সরকারের প্রনোনদনা হিসেবে বীজ সার ও নগদ টাকা চাষিদের মাঝে বিতরন করায় কৃষি কর্মকা-ে ব্যপক সারা পরে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসীম উদ্দীন শরণখোলায় যোগদান করার পর কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করে। তার অংশ হিসাবে গত বছর থেকে ফসলি মাঠে যাতে লবন পানি উঠতে না পারে সেজন্য স্লুইজগেট গুলো বন্ধ করে দেয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে পতিত জমিতে শুরু হয় বোরো ধানের চাষ। গত বছর প্রায় ১হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়। ফলন বাম্পার হওয়ায় চলতি মৌসুমে সহ¯্রাধিক বিঘায় বোরো চাষের টার্গেট থাকলেও প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগের উপসহকারি, ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা মশিউল আলম জানায়। তিনি আরো জানায় ৫০ জন চাষিকে প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। ৭০০ চাষিকে সরকারি প্রণোনদনা হিসাবে বীজ সার প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলার পূর্ব খাদা আলোচিত বোরো ফসলের মাঠ সরেজমিনে দেখতে গেলে এ বোরো চাষ প্রকল্পের সভাপতি চাষি হারেজ আকন সদস্য এমাদুল হক, সুলতান হাওলাদার, শাহজাহান মাতুব্বর বলেন আমরা ৪০ জন চাষি প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। ফলন বাম্পার হয়েছে। ঈদের আনন্দের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটা শুরু করবো। তারা আরো বলেন ৩ বছর পূর্বে মিলন চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় এ মাঠে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের লজিক প্রকল্পের অর্থায়নে মাঠের দুদিকে ৩ হাজার ৫০০ ফিট ড্রেন নির্মাণ করায় মাঠ জুড়ে মেশিনের সাহায্যে পানি সরবারাহে সুবিধা থাকায় বোরো চাষ সহজ হয়েছে। এ সময় উপস্থিত থাকা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাসিবুল ইসলাম মনি বলেন এ মাঠে ৪০ জন চাষির মধ্যে ৪২ বস্তা ইউরিয়া, ২৪ বস্তা পটাশ, ১৪ বস্তা ড্যাপ, ৪২০ কেজি জিপসাম ও ৬০ কেজি বোরন সার বিতরণ করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসীম উদ্দীন বলেন, বছরে আমন ফসল ওঠার পর হাজার হাজার বিঘা জমি পতিত পরে থাকত। এটা দেখে আমরা বোরো, শাক-সবজি, ভুট্ট, গম, মিষ্টি কুমড়াসহ একই জমিতে একাধিক ফসল চাষে উদ্ভুদ্ধ করি চাষিদের। লবন প্রতিরোধে ছয়টি স্লুইজগেট বন্ধ করে দেই। আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করে সফল হয়েছে চাষিরা। চলতি মৌসুমে সরকারি প্রনোনদনা হিসেবে বীজ ও সার প্রদান করায় ব্যাপক জমিতে বোরোর চাষ করেছে চাষিরা। উন্নত ফসল উৎপাদনে চাষিদের সবসময় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে। ফলনও বাম্পার হয়েছে। আগামী বছর আরো বেশি জমিতে বোরো চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।