ঈদের আগেই যেনো ঈদানন্দ বয়ে গেল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কুলতলি গ্রামে। ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসনের আগমনকে ঘিরে দেশের উপকূলীয় এ গ্রামটিতে বেশ কয়েকদিন ধরে বিরাজ করছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষগুলো ড্যানিশ রাজকুমারির আগমনে আশায় বুক বাঁধে। তারা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন ড্যানিশ রাজকুমারির কাছে।
স্থানীয় পরিবেশবিদ ও গবেষক পিযুষ বাওয়ালিয়া জানান, একদিনের সফরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এসছিলেন ড্যানিশ রাজকুমারি ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসন। নানা কর্মসূচি শেষ করে বুধবার বিকাল ৫টায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে বুধবার সকাল ১০টা ১২ মিনিটের দিকে ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসন মুন্সিগঞ্জ এলাকার ধানখালীতে নির্মিত হ্যালিপ্যাডে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি হ্যালিকপ্টারে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি গাড়ীযোগে মুন্সিগঞ্জ থেকে তিন কিলোমিটার দূরে শ্যামনগরের কুলতলী গ্রামে গিয়ে জলবায়ু অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলেন। পরে সুন্দরবন ভ্রমণ শেষে তিনি শ্যামনগর ত্যাগ করেন।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা জানান, রাজকুমারী কুলতলী গ্রামে যেয়ে বেড়িবাঁধের ওপর কিছুক্ষণ হাঁটেন ও আশ্রয় কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেন। পরে কুলতলী গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বলেন। গ্রামবাসি তাকে জানিয়েছে, দূর্যোগে ভঙ্গুর বাঁধের জন্য তারা প্রায় প্রতিবছর ঘরবাড়ি হারান।
এছাড়া এলাকায় বেকারত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, চিংড়ি ঘেরে লোকবল কম লাগে। অপরদিকে মিষ্টি পানির অভাবে কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জলাভূমি খনন করে মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করে এলাকায় কৃষি ব্যবস্থা আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।
কুলতলী গ্রামের পুষ্প রাণী ম-ল জানান, রাজকুমারীর আগমনে তারা খুবই খুশি। রাজকুমারীর সাথে তাদের কি কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুলতলী খাল খননের ফলে এলাকায় মিষ্টি পানির যোগান বেড়েছে। খালের মিষ্টি পানির বদৌলতে এক ফসলের পরিবর্তে এখন দুটো ফসল হচ্ছে।-এসব কথা রাজকুমারীকে বলা হয়েছে।
রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসন ঘুরে দেখেছেন কুলতলী এলাকার বেড়িবাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্র। ঝড়-সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির টিম লিডার জগদীশ চন্দ্র ম-ল।
তিনি জানান, আমি রাজকুমারীকে দূর্যোগকালীন সময়ে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছি। বাড়ি-ঘর ছেড়ে মানুষেরা আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায়না। কিন্তু যখন দূর্যোগের মুখে পড়ে অসহায় হয়ে পড়ে, তখনই তারা ছাগল-গরু নিয়ে ঝড়ের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আসে। এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান টিম লিডার জগদীশ চন্দ্র ম-ল।
দুপুরে মুন্সিগঞ্জের বরষা রিসোর্টে মধ্যাহৃ ভোজ সেরে রাজকুমারী সুন্দরবন ভ্রমণে কলাগাছী এলাকায় যান। সুন্দরবনের মধ্যে পর্যটন এই স্পটে রাজকুমারীকে স্বাগত জানান খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, পুলিশ সুপার মো: মোস্তাফিজুর রহমান-পিপিএম বার।
এবিষয়ে সুন্দরবন, সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, বিশে^র বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন সম্পর্কে রাজকুমারীকে বিশদ ধারণা দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবন ভ্রমন শেষে বিকেল ৫টার দিকে রাজকুমারী হ্যালিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফিরে যান। এ সময় এলাকার হাজারো মানুষ হাত নেড়ে রাজকুমারিকে অভিবাদন জানান। রাজকুমারিও হাত নেড়ে তাদের অভিবাদনের জবাব দেন। অবশেষে হেলিকপ্টার আকাশে উড়লো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করা হাজারো মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডেনমার্কের রাজকুমারী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসনের সফর সম্পন্ন হয়েছে। তার নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে এসএসএফ ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। তার নিরাপত্তাকে নির্বিঘœ করতে সাংবাদিকসহ সাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়।