বরেন্দ্র অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বৈশাখী ঝড়-বৃষ্টি ও শ্রমিক সংকটের মধ্যেই মাঠ থেকে কাটাধান তুলতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকরা। মাঠে ১৫% ধান কাঁচা থাকলেও কাঁচা-পাকা ধান কেটে গৃহস্তের বাড়িতে ট্রাকটর(কাঁকড়া)র সাহায্যে কাটাধান তুলছে স্থানীয় শ্রমিকেরা। কয়েকদফা শেষ বৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টির করাণে মাঠের ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানকাটা শ্রমিকের সংকট থাকলেও মহিলা শ্রমিক দিয়েই ধান কাটা শুরু করেছেন গৃহস্তরা। চলমান বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করার জন্য শেষ সময়ে জনপ্রতি ৭০০টাকা হিসেবে ৪জন শ্রমিকের মজুরী ২হাজার ৮০০টাকা, ১বিঘা ধান ট্রাকটরে(কাঁকড়া)তে করে গৃহস্তের বাড়িতে পৌঁছাতে ১হাজার ২০০টাকা, মেশিনে ধান মাড়াই করতে ১হাজার টাকাসহ মোট ৫হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এবছর চাঁপাইনবাবগাজ জেলার ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ এবং নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলায় আবাদকৃত বোরোধান একই সাথে পেকে যাবার করেণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রমতে এবছর বোরো আবাদের ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তাই এ মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। সাম্প্রতিক কয়েকদফা বৈশাখী ঝড়ো বাতাসে আধা পাকা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও ফলনে তেমন প্রভাব পড়বেনা বলে আশা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ ও উপসহকারি কৃষি অফিসার আমিনুল ইসলাম। তবে মাঠের পাকা ধান তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষদেরকে। সূত্রমতে উপজেলায় ৯২৫ হেক্টোর জমিতে হাইব্রীড জাতের আবাদ হয়েছে। হাইব্রীড জাতের ধান ঝড়ো বাতাসে একটুও নুয়ে পড়েনি। কৃষকরা বোরো মৌসুমে বেঁটে জিরা, রডজিরা ও ব্রী-৫৮ জাতের প্রচুর আবাদ করেছেন। বেঁটে জিরা, রড জিরা, ব্রী-৫৮ ও ব্রী-৮১ জাতের বোরো ধান ঝড়ো বাতাশ সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল তাই এধরনের ধান চাষের জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ জানান, এবছর নাচোল উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ৯হাজার ৯০০ হেক্টোর। কিন্তু আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও বীজচারা পর্যাপ্ত হওয়ায় রবিশস্য উঠানোর পরও কৃষকরা ওই জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। নাচোল উপজেলায় প্রায় ৯হাজার ৯শ’ ৯০ হেক্টোর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবছর উপসি জাতের আবাদ হয়েছে ৯হাজার ৬৫ হেক্টোর ও হাইব্রীড জাতের আবাদ হয়েছে ৯২৫ হেক্টোর। চলমান নি¤œচাপটি কাটিয়ে উঠলে উপসি জাতের প্রায় ১হাজার ৩শ’ ৭৪ মেট্রিকটন ও হাইব্রীড জাতের প্রায় ১২৪ মেট্রিকটন অর্থাৎ প্রায় ১হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতে পারে। উপসহকারি কৃষি অফিসার রাকিবুল হাসান জানান, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ১শ’টি প্রদর্শনী প্লট আছে। পলিথিন থেরাপির মাধ্যমে তীব্র শীত উপেক্ষা করে বীজচারা উৎপাদন, সঠিক সময়ে সেচ, রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকসহ অন্যান্য পরিচর্যার ফলে এবছর বোরোর বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধে চেয়ে আছেন কৃষক। বৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টির ভয়ে অনেক কৃষক প্রায় ১৫% কাঁচা ধান ঈদুল ফিতরের আগেই কাটতে শুরু করে কৃষকরা। উপজেলার হাঁকরইল গ্রামের কৃষক আলহাজ¦ সেকান্দার আলী জানান, তিনি এবছর সাড়ে ৫বিঘা সরিসা উঠিয়ে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। মাঠে ধানও হয়েছে মাশাআল্লাহ। কিন্তু বৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টির ভয়ে কিছু ধান কাঁচা থাকতেই কাটা শুরু করে দিয়েছি। একই গ্রামের আবদুল মালেক ও সূর্যপুর মোড়ের আশরাফুল হক জানান, তারা দু’জনে প্রায় ২৭ বিঘা বেঁটে জিরা ও রড জিরা ধানের আবাদ করেছেন। বৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ভয়ে মাঠের কাঁচা-পাকা ধান কেটে এখন মাঠ থেকে দ্বিগুন খরচে তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা।