পাংশা শহরের বারেক মোড়ে অবস্থিত মদিনা ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ডাক্তারের ভুল অপারেশনে ১৫ দিন পরে সিজারিয়ান রাগীর মৃত্যু হয়েছে। ঈদের আগে ১লা মে সকাল দশটা থেকে ১১ টার মধ্যে রকালুখালীর রতনদিয়া ইউনিয়নের লষ্করদিয়া গ্রামের সিদ্দিক কাজীর মেয়ে ও বাগলপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী মদিনা ক্লিনিক ও ডায়ানষ্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। ওই ক্লিনিকের খন্ডকালীন চিকিৎসক ডাঃ গিয়াস উদ্দিন খান ভর্তি হওয়া অন্তঃস্বত্ত্বা রোগী নাসিমা বেগমের সিজার অপারেশন করেন।
এসময় নাসিমার একটি মেয়ে বাচ্চা জন্ম হয়। অপারেশনের ৩দিন পর নাসিমাকে বাড়িতে নেওয়া হলে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং তাকে আবার পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া হয়। এ সময় তার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।সেখানেও তাকে ভর্তি না রেখে ঢাকায় রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা।ঢাকায় আদদ্বীন হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার কোন ধরনের উন্নতি না হওয়ায় তাকে কয়েকদিন আইসিইউতে রাখেন চিকিৎসকেরা।
সেখানে রোগীর পেট ধীরে ধীরে ফুলতে থাকায় পায়খানা ও প্র¯্রাব বন্ধ হওয়ায় রোগীর শারিরীক অবস্থার আরো অবনতি হয়। এ সময় চিকিৎসকরা অপারেশন স্থানে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে সেখানে খাদ্য নালী কেটে যাওয়ার কথা বলেন রোগীর অভিভাবকদের। পরে গত ১৬ মে রোগীর মৃত্যু হয়। এ সময় রোগীকে বাড়িতে নিয়ে এসে সেদিন রাত ১০টার দিকে স্থানীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।নাসিমা বেগম তার নয়ন নাম ৭ বছরের একটি ছেলে ও ২০ দিন বয়সের একটি মেয়ে বাচ্চা রেখে যান। এ ঘটনায় পাংশা থানায় নামিার পরিবার একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
তবে এ অভিযোগের কথা শুনে ডাঃ গিয়াস উদ্দিন খান ও তার আত্মীয়স্বজন নাসিমার পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে তাদের আড়াই লক্ষ টাকা দেন নাসিমার পরিবারের হাতে। এ মিমাংসা করেন ডাঃ গিয়াস উদ্দিনের শ্বশুর পাংশা পৌর মেয়র ওয়াজেদ আলী মাস্টার, পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান ওদুদ মন্ডল ও কালুখালীর ছাত্রলীগ নেতা খলিল সহ কয়েকজন। তবে স্থানীয়রা বলেন, এ ধরনের ডাক্তারদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানান।
তবে নাসিমার বাবা সিদ্দিক কাজী জানান, তিনি তার মেয়েকে বাঁচাতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়েছেন।বাড়ির গরু ছাগল থেকে শুরু করে সব কিছু বিক্রি করে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা খরচ করেও মেয়েকে বাচাতে পারেননি।আর সামান্য এ টাকা দিয়ে তার কি হবে, যেখানে তার মেয়েকেই বাচাতে পারলেন না।স্বামী দেলোয়ার জানান, তার স্ত্রীর মৃত্যু হলেও এখন তার কোন অভিযোগ নেই।
ডাঃ গিয়াসউদ্দিন খান রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন এবং বর্তমানে তিনি কোন রোগীর চিকিৎসা করেন না।তিনি শুধু মৃত দেহের পোস্ট মর্টেম করে থাকেন বলে জানান সদর হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
তবে এ বিষয়ে ডাঃ গিয়াস উদ্দিন খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,তিনি যে রোগীকে সিজার করেছেন কিন্তু তার অপারেশনে কোন ভুল ছিলনা। অন্য কোন কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করেন।তবে এ মৃত্যু তার অপারেশনের কারনেই হয়েছে এবং সিজারের সময় খাদ্য নালী কেটে ফেলার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলা হলে তিনি এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে আরো বিস্তর জানতে কয়েক বার তার ফোনে ফোন করা হলেও তিনি বার বার ফোন কেটে দিয়েছেন।
রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ইব্রাহিম টিটন বলেন,এ মৃত্যু বিষয়ে তার কাছে কোন অভিযোগ করেনি এবং ডাক্তারের মাধ্যমে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে কোন অভিযোগ না পাওয়া গেলেও তিনি ক্লিনিক ও ডাক্তারের বিষয়ে কোন ত্রুটি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন,বিষয়টি তিনি জেনেছেন তবে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, অনুমোদন না থাকা কিøনিক মাঝে মাঝে গুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত চালানো হয়। তবে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিম এক অনুষ্ঠানে বলেন, ডাঃ গিয়াসউদ্দিন একজন মাদকাসক্ত তাই তার হাতে প্রসুতি রোগী মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। এসব ডাক্তারদের দ্বারা কোন রোগীর চিকিৎসা যেন না করা হয় সেদিকে মালিক পক্ষকে নজর দিতে বলেন।