বিল কুজইনের পর এবার একই ইউনিয়নের বিবিষন এলাকায় উজানের ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়া বিলাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিলের সংযোগ সড়কে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ধান বোঝাই অর্ধশতাধিক যানবাহন আটকে রয়েছে। এ ছাড়া বাঁধের এপারের পানি ঢুকে শতশত একর জমির ধান নিমজ্জিত হয়েছে। কৃষকরা যে যে রকম করে পারছে ধান কেটে নিরাপদ স্থানে রেখে দিচ্ছে। তবে শ্রমিক সংকট আর অতিরিক্ত শ্রমিকের মূল্য দিতে হিমসিম খাচ্ছে কৃষকরা।
গত একসপ্তাহের আগে থেকে ভারতের উজানের ঢলের পানি অব্যাহতভাবে পূণর্ভবা নদীর এসে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই পানি বিলের নিম্নাঞ্চল এলাকায় ঢুকে পড়ে বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত পানি প্রবেশ করায় নতুন নতুন জমির ধান নিমজ্জিত হচ্ছে।
এদিকে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিবিষন (লালমাটিয়া) খাঁড়ির উপর নির্মিত অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে পড়ায় সিঙ্গাবাদ পাথার বিলে নতুন করে ঢলের পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে করে ওই বিলে থাকা শতশত একর জমির উঠতি বোরো ধান নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে ওই মাঠের কৃষকরা। তাঁরা জানায়, গত কয়েক দিন যাবত ওই খাঁড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পূর্ণভবা নদীর পানি খাঁড়িতে প্রবেশ করায় তাতে থাকা অস্থায়ী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় খাঁড়ির ওপারে থাকা প্রায় অর্ধ শতাধিক ধান বোঝাই ট্রাক্টর আটকা পড়েছে। রোববার দুপুরে ওই এলাকা সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার কৃষকরা আতঙ্কিত হয়ে নৌকা যোগে কিছুকিছু করে ধান সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। এদিকে, ওই বাঁধ ভেঙে বিলের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আটকে পড়া ধান পরিবহন করতে পারছেনা। এ সময় তারা বাঁধটি সংষ্কার করে বিলের সাথে সড়ক যোগাযোগ পুণঃস্থাপনের দাবি জানান। এর আগে গত সপ্তাহে পূণর্ভবা নদী থেকে পানি প্রবেশ করা পাশ্ববর্তী বিল কুজাইন ও চন্দের বিলের সাথে ওই বিলের সংযোগ থাকায় সেখানেও ঢলের পানি প্রবেশের সম্ভবনা রয়েছে বলে তাঁরা জানায়।
এদিকে বিভিষন গ্রামের কৃষক নেফাউর রহমান জানান, দিন দিন পূণর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিল এলাকার বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। গত কয়েক দিনের লাগাতর বৃষ্টিপাতের কারণে আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসে ঢলের পানিতে বিলগুলো নিমজ্জিত হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাজ্জাদ আলীর জানান, তাঁর কয়েক বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। বাকি ধান কেটে রাখা আছে। গাড়ি চলাচল না করায় ধান নিয়ে আসতে পারছেননা। এদিকে নৌকায় নিয়ে যেতে বিঘা প্রতি দুই হাজার টাকা নিবে। আর শ্রমিকের নিচ্ছে এক হাজার টাকা।
এলাকাবাসি বলেন, জমির ধান নিমজ্জিত হতে দেখে উপস্থিত কৃষকদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। তাঁরা জানান,এমনিতেই ধান কাটা শ্রমিকের সংকটের কারণে সময়মত ধান কাটতে পারেননি। তাঁর উপর দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়া কারণে কাটাধান জমি থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে হঠাৎ করে ঢলের পানিতে নতুন করে খাঁড়ির উপর বাঁধ দিয়ে তৈরি করা রাস্তাটি পানিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় উঠতি বোরোধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। এদিকে কৃষকসহ এলাকাবাসীর অনেকদিনের দাবি, জশৈল-বিবিষন (চালনা) খাঁড়ির ঘাটে সেতু বা কালভাট নির্মাণের ব্যবস্থা করা হোক। যাতে বিলাঞ্চল থেকে ধান সংগ্রহ করতে কৃষকদের সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে না হয়ে থাকে।
ভেঙে যাওয়া বাঁধ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমান জানান,গত কয়েক দিন যাবত বাঁধটি স্থানীয়ভাবে সংষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও পানির তোড়ের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে, ওই এলাকার বাসিন্দা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান নুহু জানান, উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বর্ষা মৌসুমে বিলাঞ্চলের এ দূরাবস্থার কথা তুলে ধরা হলেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।