নন্দীর বাজার-বকশীগঞ্জ-রৌমারী আঞ্চলিক সড়কের কাজ শেষ হয়নি দীর্ঘ চার বছরেও। এদিকে অব্যাহত খোঁড়াখুঁড়িতে দূর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণ। বেহাল সড়কটিতে ছোট-বড় হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দে ভরা সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং দুর্ভোগ বেড়েছে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের। চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তিন জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
জানা যায়, ২০১৮ সালে শেরপুরের নন্দীরবাজার মোড় হতে বকশীগঞ্জ হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার সড়ক মজবুতিকরণ ও প্রশস্ত করনের জন্য ৩৭৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প একনেক সভায় পাশ হয়। দরপত্র আহবানের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন, তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ, ভাওয়াল কনস্ট্রাকশন, ইনস্পেক্টা ইঞ্জিনিয়ারিং ও এম এম বিল্ডার্স কাজ পায়। এর মধ্যে নন্দীর বাজার থেকে ১৫ কিলোমিটার ও বকশীগঞ্জ থেকে কামালপুর হয়ে আরো ১৫ কিলোমিটর সড়কের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স। এম এম বিল্ডাসের পাওয়া ৩০ কিলোমিটার সড়কের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৯৮ কোটি টাকা। একই সালের আগস্টে সড়কটির সংস্তার কাজ শুরু হয়। দরপত্রে শর্তানুযায়ী দেড় বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলে দীর্ঘ চার বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্স। প্রকল্পের সময় বাড়ানো হলেও শেষ হয়নি শেরপুর-জামালপুর-রৌমারী সড়কের মজবুতিকরণ ও প্রশস্তকরণের কাজ। ৫৯ কিলোমিটার প্রকল্পটির ২৯ কিলোমিটার সড়কের কাজের অগ্রগতি হলেও এখনও বেহাল নন্দীর বাজার থেকে ঝগড়ারচর ও বকশীগঞ্জ থেকে ধানুয়া কামালপুর হয়ে রৌমারী সড়ক। কাজের দায়িত্বে থাকা এম এম বিল্ডার্স গত চার বছরে ৩০ কিলোমিটার সড়কের মাত্র ৪০ ভাগ কাজ শেষ করতে পেরেছে। জামালপুর সড়ক বিভাগ থেকে একাধিকবার কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দেওয়া হলেও গুরুত্ব দেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাধ্যহয়ে এম এম বিল্ডার্সের চুক্তি বাতিল করে গত দুই মাস আগে পুন: দরপত্র আহবান করে সড়ক বিভাগ। পুনরায় দরপত্রের মাধ্যমে এম এম বিল্ডার্সের পাওয়া ৩০ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্টাকশন ও মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং। তমা কনস্টাষ্ট্রাকশন ও মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং চলতি মাস থেকেই কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। এদিকে দেড় বছরের কাজ চার বছরেও শেষ না হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। দ্রুত সড়ক নির্মানের কাজ শেষ করার দাবিতে বেশ কয়েক বার মানববন্ধনও করেছে স্থানীয়রা।
অপরিদেক দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় ভাঙ্গাচোরা বেহাল সড়কে ঝুকিঁ নিয়ে চলছে দূর পাল্লার বাস,ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। প্রতিদিনই রাস্তায় বাস ট্রাক গর্তে আটকে পড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ,রাজিবপুর উপজেলা,জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও শেরপুর জেলার ঝগড়ারচর,কামারেরচরসহ সড়কে চলাচলকারী লাখ লাখ মানুষ। বেশি দূর্ভোগে পড়েছে কর্মজীবি মানুষ, স্কুল কলেজ পড়-য়া শিক্ষার্থী ও বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ রোগীরা।
এ ব্যাপারে কামালপুর এলাকার বাসিন্দা সরকারি কেইউ কলেজের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান, মনিরা বেগম ,ঝাউডাঙ্গা এলাকার শিক্ষার্থী হিরা মনি,কবিতা ও দীপা বলেন,রাস্তা ভালো না থাকায় সময়মতো যানবাহন পাওয়া যায়না। এতে করে আমরা অনেক সময় সঠিক সময়ে কলেজে যেতে পারি না। আবার যানবাহন পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অটো রিক্সা ভ্যান উল্পে অনেক সময় সড়কের গর্তের কাদা দিয়ে আমাদের জামা কাপড় নষ্ট হয়। সেদিন আর কলেজে যাওয়া হয়না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটির কাজ শেষ করতে স্থানীয় এমপি আবুল কালাম আজাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
রাজিবপুর উপজেলার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন,ভৌগলিক কারণে রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলা কুড়িগ্রাম জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই দুই উপজেলার মানুষ নিজেদের সুবিধার্থে বকশীগঞ্জ-জামালপুর হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি এতটাই বেহাল চিকিৎসাসহ জরুরী প্রয়োজনে সড়কে চলাচল খুবই কষ্টকর। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে।
রৌমারী থেকে ঢাকাগামী সিয়াম পরিবহনের চালক বাবুল মিয়অ বলেন,আমার মনে হয় দেশের কোথাও এত খারাপ সড়ক আর নেই। রৌমারী থেকে বকশীগঞ্জ মাত্র ৪০ কিলোমিটার রাস্তা। ৪০ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। এ ছাড়া সড়কের মাঝে গর্তে অনেক সময় আটকে যায় গাড়ি। এতে গাড়ির ক্ষতি হয় এবং যাত্রীরাও দারুণ ভোগান্তির শিকার হয়।
রামরামপুর এলাকার বাসিন্দা আক্রাম মিয়া বলেন,সড়কের যে অবস্থা জরুরী প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত আসতে চায়না। মুমুর্ষ কোন রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সময়মত যানবাহন পাওয়া যায়না। কবে এই দূর্ভোগ শেষ হবে তা আল্লাহ জানে।
বকশীগঞ্জ মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি রোকনুজ্জামান বাবু বলেন,সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে বিয়েসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ভাড়া পেলেও চালকরা রাজিবপুর-রৌমারী যেতে চাননা। এতে যাত্রীরা পড়েন বিপাকে আর মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
বকশীগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন,এটি অনেক বড় প্রকল্প। প্রায় ৩৭৪ কোটি টাকার কাজ। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সরকারের বদনাম হচ্ছে ও তিন জেলার মানুষ সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছে।
জামালপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.বিএম সাদ্দাম হোসেন বলেন,দুই ভাগে ৩০ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় এম এম বিল্ডার্স। সময় মতো কাজ শেষ না করায় তাদের চুক্তি বাতিল করে নতুন করে গত দুই মাস আগে পুন: দরপত্র আহবান করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন ও মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ পেয়েছে। ভূমি অধিগ্রহন কিছু জটিলতাও ছিলো। এখন সব ঠিকঠাক আছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।