সাতক্ষীরায় চার দিনের ব্যবধানে দু’বার ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার ভিকটিম এসএসসি পরীক্ষার্থী মায়মুনা ইয়াসমিনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৩১ মে) রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়ার চাচা মুনসুর আলীর বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
মৃত মায়মুনা ইয়াসমিন সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়া ঈদগাহ এলাকার আজিজুর রহমানের মেয়ে এবং সাতক্ষীরা নবারুন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, গত ৩ মে সাতক্ষীরা শহরতলীর ইটাগাছার বনলতা হাউজিং কমপ্লেক্স এলাকায় এক সময়কার সহপাঠীর বাড়িতে গিয়ে পূর্ব পরিচিত জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের খলিষাবুনিয়া গ্রামের হৃদয় হোসেন(২১) চেতনানাশক স্প্রে করে মায়মুনা ইয়াসমিনকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবার।
একইভাবে গত ৭ মে সন্ধ্যার পর বাড়ির পিছনে এক নারীর সহযোগিতায় গোয়ালঘরে হৃদয় হোসেন তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে।
চার দিনের ব্যবধানে ওই মেয়ে দুইবার ধর্ষিত হয়েছে এমন অভিযোগে তার বাবা আজিজুর রহমান বাদি হয়ে ৯ মে সাতক্ষীরা সদর থানায় হৃদয় হোসেন ও দুই নারীর নাম উল্লেখ করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(২)/৩০ ধারায় মামলা(২০) দায়ের করেন।
মামলা রেকর্ড করার পর ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে ওই দুই নারীসহ চারজনকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভিকটিমের বক্তব্যের সাথে মামলায় বর্ণিত অভিযোগ গরমিল মনে হওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১০ মে মেয়েটি সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। একই দিনে সদর হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। মামলার পর থেকে মেয়েটি বিমর্ষ ছিল।
মিজানুর রহমান আরো জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে মায়মুনা ইয়াসমিনের লাশ তার বাড়ি সংলগ্ন ঢাকায় অবস্থানকারি চাচা মুনসুর রহমানের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েকে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ রেখে চাবি তার বাবা আজিজুর রহমান নিয়ে গিয়েছিলেন।
সাতক্ষীরা নবারুন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুল মালেক গাজী জানান, মায়মুনা ইয়াসমিন ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কিছুদিন আগে এক বখাটে ছেলে তাকে চেতনানাশক দ্রব্য স্প্রে করে ধর্ষণ করেছিল বলে শুনেছিলাম। বিষয়টি নিয়ে স্কুলে বসে ওই ছাত্রীকে কাউন্সিলিং করা হয়, যাতে তার উপর কোন প্রভাব না পড়ে। তার মৃত্যুর খবরে গোটা স্কুলে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম কবীর জানান, মায়মুনা ইয়াসমিনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মায়মুনার পিতা বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। মরদেহের ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।