৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। বায়ুমন্ডলে পুঞ্জিভূত গ্রিণহাউস গ্যাস উৎসারণের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা নেই বললেই চলে। তবে বিশ্বে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। ১৯৭২ সালের জুন মাসে সুইডেনের স্টকহোমে জাতিসংঘের মানব পরিবেশের ওপর প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের ২৭ তম অধিবেশনের প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঐ সম্মেলনের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশ দিবস উদযাপিত হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ঝুঁঁকির মধ্যে পড়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি বাংলাদেশ। সবুজ বন, নদী, নালা ও জলপ্রপাত এদেশের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য আরো মণোরম করেছে। কিন্তু বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নানা কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলি আক্রান্ত হয়েছে জনজীবনে নেমে এসেছে নানা বিপর্যয়। বিশ্বে মানুষের যত রকম ঝুঁকি রয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা তার মধ্যে অন্যতম। বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য মূলত কার্বনডাই অক্সাইডকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এর সাথে মিথেন, নাইট্রস অক্সাইড, ক্লোরফ্লরো ইত্যাদি গ্যাস বিশেষ ভূমিকা রাখে। গ্রীণহাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবী ক্রমাগত উষ্ণ হচ্ছে। মানব সভ্যতার অগ্রগতি, প্রযুক্তি ও শিল্প উন্নয়নে নির্মাণকারী কারখানা, শিল্প কারখানা থেকে বায়ুমন্ডলে সি এফ সি গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। মানুষের অসচেতন কর্মকান্ডের ফলে বায়ুমন্ডলে এসব গ্যাস যুক্ত হয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতায় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্পন, জলোচ্ছাস, পাহাড় ধস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী ভাঙ্গন, পানির স্থর নিচে নেমে যাওয়া, অসময়ে অধিক বৃষ্টি ও অধিক খরা সহ বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে হিমালয়ের বরফ, উত্তর মেরু ও এ্যান্টাকটিকার বরফ গলতে শুরু করেছে। সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। গত ১০০ বছরে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১৫ সে: মি: থেকে ২৫ সে: মি:। বছরে বৃদ্ধির হার ১.৫ সে: মি: থেকে ২.৫ সে: মি:। যা গত ৩০০ বছরের ১০ গুন। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা তাপমাত্রা এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী শতকে সমুদ্রের উচ্চতা বছরে বৃদ্ধি পাবে ৩০ সে: মি: থেকে ৪০ সে: মি:। এর ফলে পৃথিবীর অনেক নিম্ন অঞ্চল তলিয়ে যাবে। সূত্র মতে বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ৫ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করবে। পৃথিবীর ১০ভাগ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। বছরে প্রায় ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম পরিমাণ ক্ষতি হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বায়ুমন্ডলের পুঞ্জিভূত গ্রীণহাউস গ্যাস উৎসারণে বিশ্ব উষ্ণায়নে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় ক্রমাগত ঝুঁকি বাড়ছে। সাগরে প্রতিনিয়ত নিম্নচাপ, বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, খরা, কৃষি কাজকে বাধাগ্রস্থ করছে। পানি, প্রাণী সম্পদ ও নগর উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন বড় চালেজ্ঞ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীববৈচিত্র বিপন্ন হচ্ছে এবং ভূমি, বনাঞ্চল, শিল্প, বাসস্থান, পশু সমস্যা প্রকট হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন মারাক্তক ঝুঁকিপূর্ণ। বৃষ্টিপাত ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ঘুর্ণিঝড়ের পরিমাণ বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা আশাঙ্কা করছে আগামী ৫০ বছরে বিশ্বরে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী থেকে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ ১ মিটার বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে সুন্দরবন সহ উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাবে। উপকূলীয় ১৩ জেলার ৬৩ উপজেলার ৫৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮ শত ৭৬ একর জমি তলিয়ে যাবে। যা দেশের মোট জমির ১৫.৮ ভাগ। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার আংশিক তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এতে বাংলাদেশের প্রায় ৩ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হবে। মানুষের জীবন ও জীবিকায় নেমে আসবে বিপর্যয়। বিপন্ন হবে উপকূলীয় অঞ্চল। মানব সভ্যতার উন্নয়ন কার্যক্রমে মানুষের অসচেতন কর্মকা-ে আমাদের কৃষি, বনজ, পানি, মৎস্য সম্পদ সমুহ ও জীব বৈচিত্র ঝুঁকিতে পড়েছে। আরো অনিশ্চয়তায় পড়বে যদি দ্রুত জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। তাই আর চুপ করে বসে থাকলে হবে না। সবাইকে সচেতন ও স্বোচ্চার হতে হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নে যে সমস্ত গ্যাস দায়ী আমাদের অসেচতন কর্মকা-ে সে সমস্ত গ্যাস সম্মেলিত উদ্যোগের মাধ্যমে পরিহার করতে হবে। উন্নত বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরে গ্রীণহাউস গ্যাস উৎসারণ করে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। বিশ্ব বাসিকে সুস্থভাবে বাঁচার জন্য আবহাওয়া, জলবায়ু ও বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করতে হবে। তাই দায়ী উন্নত দেশগুলোকে এর সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীতে সুস্থভাবে বাঁচার জন্য আবহাওয়া ও জলবায়ু নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ববাসীকে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
প্রেরক: মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা)।