চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেছে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস।বিএম ডিপোতে মজুত রাখা বিস্ফোরিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কম্বোডিয়া রপ্তানির অপেক্ষায় ছিল। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে বিএম কন্টেইনার ডিপোর জিএম নাজমুল খান চৌধুরী এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।
জানা যায়, এ রাসায়নিক পদার্থ বিএম কন্টেইনার ডিপোর মালিকানাধীন আল-রাজি ক্যামিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটিড কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদিত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে এসব রাসায়নিক পদার্থ রপ্তানির অপেক্ষায় এ ডিপোতে মজুদ করে রাখা হয়েছে। আর এ রাসায়নিক পদার্থ হাইড্রোজেন পারক্সাইডের কারণে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কাশেম জুট মিলস এলাকায় বিএম কন্টেইনার ডিপোতে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ডিপোতে ২৮টি কন্টেইনারে রাসায়নিক পদার্থ থাকলেও কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য গোপন করেছে।
বিএম কন্টেইনার ডিপোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকা কন্টেইনার বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে ছিটে পড়ে থাকা প্লাষ্টিকের কৌটায় যে লেভেল লাগানো ছিল তা হচ্ছে আল-রাজি ক্যামিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটিড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটি দুর্ঘটনা কবলিত বিএম কন্টেইনার ডিপোর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তৈরির কারখানাটি চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের পাশে ঠান্ডছড়ি পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে।
সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের পর লোকালয়ে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কারখানা গড়ে উঠায় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও চরম ভীতি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া কারখানার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি তুলে নেওয়ার কারণে এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে বলেও স্থানীয়রা জানান। এদিকে দুর্ঘটনা কবলিত ওই ডিপোতে ২৮টি কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
এর মধ্যে ১৫টি কন্টেইনারের খোঁজ পাওয়া গেলেও বাকি কন্টেইনারের খোঁজ মেলেনি। রাসায়নিক পদার্থ ভর্তি এসব কন্টেইনারের খুঁজে বেড়াচ্ছেন উদ্ধার কর্মিরা। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আল-রাজি ক্যামিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটিড নামের ওই কাখানাটিকে বছরে এক হাজার মে.টন হাইড্রোজেন পারক্সাইড তৈরির অনুমুতি দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অথচ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, গেল দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটি রফতানী করেছে প্রায় নয় হাজার মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। এদিকে ডিপোতে থাকা এসব হাইড্রোজেন পারক্সাইড রপ্তানির কথা ছিল কম্বোডিয়ায়। প্রয়োজনীয় অনুমোদন না থাকায় জাহাজে শিপমেন্ট হয়নি।
ফলে সেসব রাসায়নিক পদার্থ অযতেœ অবহেলায় পড়ে ছিল বিএম কন্টেইনার ডিপোতে। ডিপোতে বিপুল পরিমান রাসায়নিক পদার্থ থাকার পরও উদ্ধার কর্মিদের সঠিক তথ্য না দেয়ার কথা ভাবিয়ে তুলছে উদ্ধার কর্মিদের। আর এর ফলে সীতাকুন্ড এবং কুমিরা ফায়ার স্টেশনের কর্মিরাই নিহত হয় বলে সরাসরি অভিযোগ ফায়ার সার্ভিসের।
রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন, বিপনন এবং রফতানীর ক্ষেত্রে সুনিদিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি সংশ্লিষ্ট সবার। উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কাশেম জুট মিল গেট এলাকায় অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। এতে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক এরও অধিক মানুষ। অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন সীতাকুন্ড কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ৯ জন ফায়ার ফাইটার।
আগুন ও বিস্ফোরণে নিহতের ঘটনায় বিএম ডিপোর মালিক পক্ষকে বাদ দিয়ে কারখানার ৮ কর্মকর্তাকে আসামি করে সীতাকুণ্ড থানার এসআই আশরাফ সিদ্দিকী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। অগ্নিকাণ্ডের ৮৬ ঘন্টা পর গত বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে আগুন নিভে যাওয়ার পরও এখনো ক্ষতিগ্রস্ত কন্টেইনারের ডাম্পিং কাজ অব্যাহত রেখেছেন ফায়ার সার্ভিস। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস ডিপোতে তাদের সকল কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে ঘটনাস্থল থেকে চলে গিয়েছেন।