শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বাড়িঘর থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি
নেমে যেতে শুরু করেছে। তবে শুক্রবার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি উজানে
কমলেও ভাটিতে পানি বাড়ছে। এতে উপজেলার মালিঝিকান্দা ও হাতিবান্ধা
ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। পাহাড়ি ঢলে ঘর-বাড়ি ও
রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায়
বৃষ্টি না হওয়ায় উপজেলা পরিষদ চত্বর ও সদর বাজার থেকে পানি নদীতে নেমে
গেছে। পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যাও কমেছে। তবে উজানে পানি কমার পর
শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের হাঁসলিগাঁও, জুলগাঁও,
রাঙ্গামাটিয়া ও দেবোত্তরপাড়া এবং হাতিবান্ধা ইউনিয়নের হাতিবান্ধা, ঘাগড়া,
বেলতৈল, মারুয়াপাড়া, কামারপাড়া ও সরকারপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি
বাড়ছে। এসব এলাকার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর
বাঁধের বিভিন্ন স্থানে এবং উপজেলার গ্রামীণ ও পাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি
হয়েছে। ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ১৮০ ফুট এলজিইডির পাকা সড়ক, দেড় কিলোমিটার
কাঁচা সড়ক, মহারশি নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানের দেড় কিলোমিটার এবং
সোমেশ্বরী নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানের এক কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। অর্ধশত কাঁচা ও আধাপাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা
মারত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার ও কৃষি সম্প্রসারণ
কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২১২ হেক্টর জমিতে আউশ
আবাদ হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ২০ হেক্টর জমির আউশ আবাদ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে, ৩ হেক্টর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ৭৪০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে,
তন্মধ্যে ৩৮ হেক্টর জমির সবজির ক্ষতি হয়েছে। এতে ৩০ হেক্টর জমির সবজির
সম্পূর্ণ ক্ষতি ও ৮ হেক্টর জমির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতি
বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের ফলে মহারশি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা
পরিষদ চত্বরসহ ঝিনাইগাতী বাজার ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়।এতে
পরিষদের কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আর্থিকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই পাহাড়ি ঢলের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মহারশি নদীতে
স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, পাহাড়ি ঢলের
পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ভাটি এলাকায় পানি ঢুকছে। জেলা প্রশাসনের
পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া ১০ মেট্রিক টন খয়রাতি (জিআর) চাল ক্ষতিগ্রস্ত
পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের ডিও লেটার
দেয়া হয়েছে। মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসক
মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
উল্লেখ্য, ভারী বর্ষণ এবং মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত
বৃহস্পতিবার ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ২০
গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে ঝিনাইগাতী সদর, কাংশা ও ধানশাইল
ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। আর নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও
চেল্লাখালি নদীর পানি প্রবেশ করে যোগানিয়া ইউনিয়নের আরও ৮ টি গ্রামের
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ভেসে যায় শতাধিক পুকুরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়
আউশ ও সবজির আবাদ। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গ্রামীণ সড়কের।