দিন যতই ঘনিয়ে আসছে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আমেজ উৎসব-আনন্দ ততই কাছে আসছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার স্থান মাদারীপুরের বাংলাবাজারে সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন। অন্যদিকে সিলেট হবিগঞ্জ সুনামগঞ্জ গোয়াইনঘাট কোম্পানীগঞ্জ কানাইঘাট বিয়ানীবাজার জৈন্তাপুর শেরপুর বগুড়া বন্যায় সিংহভাগ তলিয়ে গেছে। বন্যার সার্বিক অবনতি হওয়ায় এমএজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সুরমা-কুশিয়ারা ও তিস্তা নদীতে ক্রমান্বয়ে পানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বানভাসি মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। ঘরদোর পানির নিচে রেখে কোথায় থাকে এসব মানুষেরা? কাঁথা কম্বল বালিশ নারী ও শিশু কোথায় আশ্রিত হয়? গবাদিপশুর কি অবস্থা তা সত্যি হৃদয় বিদারক। এসব চিন্তা করে দেশের চলমান এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
দেশের ভেতরে একদিকে সপ্তাহব্যাপী আনন্দ-উৎসব সংগীতা অনুষ্ঠান অন্যদিকে কান্না আর কান্নার শব্দে প্রকম্পিত জনপদ। জলরাশির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই। গবাদিপশু পানির সাথে ভেসে যাচ্ছে। শিশু ও নারী নিয়ে পোহাতে হচ্ছে ভয়াবহ বিপদ এই বর্ষার ও বন্যার দিনে। চলমান সংকটে বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা, এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণায় বোঝা যাচ্ছে জল দুর্ভোগ কতটা সীমা ছাড়িয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। স্মরণকালের বন্যায় সিলেট ও তৎঅঞ্চল তলিয়ে গেছে। তদুপরিও কি আমাদের পদ্মা সেতুকে ঘিরে উৎসবের প্রয়োজন আছে?
দেশের ভেতরে পদ্মা সেতু বিশাল একটা ব্যাপার। বহু বাধা-বিপত্তি সংকট উতরিয়ে পদ্মা সেতুতে আলো জ¦লে উঠলো। সত্যিই বাঙালি জাঁতি হিসেবে আমাদের সকলের গর্বের, আনন্দের শেষ নেই। আজ যদি বন্যার করাল গ্রাসে বাঙালি জাঁতি পানির নিচে তলিয়ে না যেতো, দূর্ভোগে বানভাসি না হতো, মানুষেরা না পড়তে চরম বিপদে, তাহলে দেশজোড়া আনন্দের বন্যায় ভেসে যেতো। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে মুক্তিযুদ্ধের মত দেশ প্রেম, ঈদের মতো আনন্দ উৎসব পৌঁছে যেতো। কিন্তু ভারতের কূটচালে প্রতিবছরই আমাদের দেশের প্রায় আট দশটি জেলাকে বন্যায় ভাসিয়ে দেয়, তাতে আমাদের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লস হয়।
দেশের ভেতরের উত্তরের মানুষকে বিপদে রেখে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আনন্দে মেতে ওঠা, একই ঘরের এক কক্ষে মৃতদেহ রেখে আরেক কক্ষে উৎসব করা কতটা যুক্তিযুক্ত!
গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদক্ষেপ এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা ও এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত রাখার বিষয়টি যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছে। তেমনি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষন স্থগিত রাখা যেতে পারে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এলে, দেশের সার্বিক দুর্ভোগ কেটে গেলে পূণতারিখ ঘোষণা করে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা যেতে পারে।
আমরা কি দেশের প্রায় চার ভাগের এক ভাগকে বিপদে রেখে ও জনসাধারণের বুকফাটা কান্নার শব্দের ভিতর সাউন্ডবক্সে নিত্যের সুর ঝংকার, শিল্পীর গানের সাথে যন্ত্রোৎসবে মেতে উঠতে পারি? আশা করছি সংশ্লিষ্ট সবার শুভোদয় ঘটবে।
লেখক কবি প্রাবন্ধিক কলামিস্ট ও সাংবাদিক।