দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র, বঙ্গবন্ধুর মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী থেকে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ও শুক্রবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ডিম সংগ্রহকারীরা ৩য় দফায় ডিম সংগ্রহ করে। মৌসুমের একপ্রকার শেষ পর্যায়ে সংগৃহীত ডিম থেকে এখন রেনু ফোটানোর উৎসব চলছে হালদার পাড়ে। উৎসবের এই ক্ষনে প্রবল বর্ষনে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। আর বন্যার কারণে ডিম আহরনকারীদের উৎসবের আনন্দ ম্লান হয়ে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে দিগন্তের। ডিম থেকে রেনু ফোটানোর হ্যাচারীতে যাতায়াতে রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ক্রেতা সংকটের আশংকায় ভুগছে ডিম আহরনকারীরা। আর ক্রেতা না পেলে হালদা নদী থেকে কষ্ট করে সংগৃহীত ডিম বিক্রি শংকায় দিন কাটাচ্ছে ডিম আহরনকারীরা।
জানা যায়, গত ১৬ মে হালদা নদীতে মাছ ১ম দফা ডিম ছাড়ে। মাঝ খানে আবার সামান্য পরিমান ডিম ছাড়ে মাছ। পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এবং শুক্রবার দৃপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ডিম ছাড়ে মাছ। ডিম আহরনকারীরা সংগ্রহের পর ডিম থেকে রেনু ফোটানোর কাজ শুরু করে। ৪/৫ দিন পর ডিম থেকে ফোটানো রেনু বিক্রি শুরু হয়। সেই হিসাবে বুধবার থেকে রেনু বিক্রি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান ডিম আহরনকারীরা। এবার ১ ম দফায় স্বল্প পরিমান ডিম সংগ্রহ হওয়ায় রেনুর দাম ভালো ছিল। গত ২১ মে প্রতি কেজি রেনু বিক্রি হয়ছিল হ্যাচারী ভেদে ১ লাখ ৬০/৭০ ,৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। ৩য় দফায় গত বৃহস্পতি / শুক্রবার সংগৃহীত ডিম থেকে ফোটানো রেনুর ভালো দাম পাওয়া প্রত্যাশা ছিল ডিম সংগ্রহকারী ও রেনু উৎপাদনকারীদের। কিন্তু হঠাৎ প্রবল বর্ষনের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে হাটহাজারী বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। বন্যার কারণে হ্যাচারী এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে ক্রেতারা রেনু ক্রয় করতে আসা নিয়ে আশংকায় ভুগছেন। ড মাছুয়াঘোনার ডিম সংগ্রহকারী মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, ৩য় দফায় সংগৃহীত ডিম থেকে উৎপাদিত রেনু বিক্রি করে কিছুটা আয়ের আশা করেছিলাম কিন্তু হঠাৎ প্রবল বর্ষনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই রেনু ক্রেতারা হ্যাচারী আসতে পারবেনা। এদিকে রেনু রাখার জন্য তৈরি করা পুকুর ও বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। তাই রেনু নিয়ে তারা সীমাহীন বেকায়দায় পড়েছে তারা।
হাটহাজারী উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযূষ প্রভাকর বলেন, ‘ভারী বর্ষণ হচ্ছে। যদি মাটির কুয়াগুলোতে অতিরিক্ত পানি ঢুকে যায় ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো মাটির কুয়ায় পানি ঢুকেনি। ডিম থেকে রেণু উৎপাদন কার্যক্রম চলছে।’
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘মাটির কুয়ায় রেণু ফোটানোর কাজ চলছে। ডিম থেকে রেণু ফুটছে, তবে এখনো পরিপূর্ণ নয়। আগামী ২৩ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আরও একটি জো আছে। সেটি শেষ জো। পঞ্চম জোতে ছাড়া ডিম পূর্ণাঙ্গ ডিম হয়ে থাকলে সামনের জোতে ডিম ছাড়বে না মা মাছ।’ ভারী বর্ষণ; রেণুতে প্রভাব পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি বন্যা হয় বা কোনোভাবে মাটির কুয়ায় পানি ঢুকে, তাহলে ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি গনমাধ্যমকে জানান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত জোয়ার-ভাটায় দুই শত নৌকা ও বাঁশের ভেলা নোঙর করে জাল ফেলে ডিম আহরণে হালদায় নামেন তিন শতাধিক আহরণকারী। গত জোতে সংগৃহীত সাড়ে ৩ হাজার কেজি ডিম থেকে রেণু উৎপাদন হয় ৬০ কেজি।