টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ যখন বন্যার সাথে যুদ্ধ করছে, ঠিক তখন রাজধানী ঢাকার দু’সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের বাস ভবনও জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত। আর রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা নতুন নয়, প্রতি বর্ষায় জনগণ জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ পোহান। এবার দু’টির দু’মেয়র বেশ দাপটের সাথে বলেছিলেন, বৃষ্টি হবার আধা ঘণ্টার মধ্যেই পানি নেমে যাবে। জন-দুর্ভোগ দূর হবে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১৭ জুন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ২১ কিলোমিটার বৃষ্টিতে দক্ষিণ সিটির বংশাল, জুরাইন, কাঁঠাল বাগানসহ ১৩ টি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যায়। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির আশ-কোনা, রায়ের বাজার, মিরপুরের কালশশীসহ ১১ টি এলাকায় দিনভর কমবেশি জলাবদ্ধতা ছিল। যদিও দুই সিটির আরও অন্তত, ৩১ টি এলাকায় পানি জমে জন-জট সৃষ্টি করলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাজী আলাউদ্দিন রোডের বাসিন্দাদের। ১ মিলিমিটার বৃষ্টিতেও তলিয়ে যায় এলাকাটি। বছরের পর বছর এমন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কাজী আলাউদ্দিন রোডের বাসিন্দারা। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নর্দমা নির্মাণের কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও তা শেষ হয় নি। মাত্র ২০ ভাগ কাজ হয়েছে। কাজেই এবারের বর্ষায়ও এলাকাবাসীর ভোগান্তি ছাড়ছে না। গত ১৭ জুন দুপুরের সামান্য বৃষ্টিতে কাজী আলাউদ্দিন রোড তলিয়ে যায়। দুপুর ১২ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সড়কটি পানির নিচে ছিল। এ ছাড়া এলাকার অন্তত ৭টি জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কাজী আলাউদ্দিন রোডকে পুরান ঢাকার পানি নিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে চিহিৃত করে কাজী আলাউদ্দিন রোড থেকে বাবু বাজার ব্রিজ পর্যন্ত ১ কিলোমিটার নর্দমা ও সড়ক সংস্কারের জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কাজ দেওয়া হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তু তারা সময় মতো কাজ শুরু না করে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে কাজ শুরু করে। ফলে বর্ষার কারণে তারা কাজও করতে পারছে না।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের বহদ্দার হাটের বাড়ি প্রাঙ্গণ ও সামনের রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর অন্যান্য এলাকার মতো মেয়রের বাড়িতেও পানি উঠে যায়। হাঁটু পানি জমে যায় মেয়রের বাড়ির উঠানে ও সামনের রাস্তায়। জলাবদ্ধতা নিরসনে চাক্তাই খালসহ আশেপাশের খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। খাল গুলো ঠিক ভাবে পরিষ্কার করা হয় না বলে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
নগর জীবনে মানুষ স¦স্থির সাথে জীবন যাপন করতে চায়। তারা পৌর কর দিয়ে নাগরিক সুবিধা পেতে চান। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য জনগণের যে আশা নিরাশনের দোলাচলে বন্দি। নগরীর খাল উদ্ধার, পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা করে জনমনে স্বস্থি আনতে দু’ সিটি কর্পোরেশনকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। শুধু কথায় ফুলঝুরি নয়, সমস্যা সমাধান আশু প্রয়োজন। কাজী আলাউদ্দিন রোডের কার্য্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার কেন সময় মতো কাজ শেষ করতে পারলো না তার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি তিনি সরকারি দলের কোন হোমড়া চোমড়া কেউ হয়ে থাকেন তবুও তাকে ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।