কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু-ছাগল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার খামারীরা। এলাকায় বেশিরভাগ নতুন খামারিরা গরু মোটা তাজা করণে কৃত্রিম পন্থা অবলম্বন না করে প্রকৃতিক খাবার ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা ও লালন-পালন করছেন। করনোর কারণে গত দুই বছরের খামারীদের এ ব্যবসায় বেশ লোকশান গুনতে হলেও এ বছর তা পুশিয়ে উঠার জন্য ভালোভাবেই রয়েছে তাদের প্রস্তুতি। গত দু‘বছরের লোকশান ও ঋণের টাকা পরিশদ করতে খামারিরা ছোট বড় গরু, ছাগল, পরিচর্যায় শেষে ছুটছে কোরবানির হাটে। বেচা-কিনার শুরুতেই দামও পাচ্ছে চওড়া। এতে খুশি খামারিরা। উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, নেছারাবাদ উপজেলায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাণিজ্যিক ও পারিবারিক ৩৫৪ টি গরুর খামারে প্রায় ২ হাজার ১৫০ টি কোরবানির যোগ্য গরু এবং ১৪০ টি ছাগলের খামারে ১ হাজার ৬৫০ টি কোরবানির যোগ্য ছাগল আছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মঠভাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, কাউখালি,হারতা, চামী,উমারপার,নাজিরপুরসহ ১১টি এলাকা নেছারাবাদের গুরুর হাটে প্রায় ৪ হাজার ১৯১টি পশু ইতোমধ্যেই প্রস্তুত রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী এ বছর এ উপজেলায় সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৪০৬টি পশুর। এ উপজেলার কোরবানির পশুর হাটগুলো প্রসিদ্ধ হওয়াতে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকার কারণে পার্শ্ববর্তী উপজেলার মানুষজন কোরবানির পশু কিনতে এইসব হাটে ভিড় জমায়। সরকারি স্বরূপকাঠি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ,সুটিয়াকাঠী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, চাঁন মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ,উত্তর-পশ্চিম সোহাগদল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও চাঁদকাঠি বাজার উপজেলায় এ ৫টি কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট বসে। কোরবানির গুরুর ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় খামারিরা ও বাইরে থেকে পাইকাররা এই হাটগুলোতে পশু নিয়ে আসেন চওড়া মূল্যে বিক্রয়ের জন্য। সরেজমিনে খামার গুলিতে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার পশুর খামারগুলো কোরবানির ঈদের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। খামারে ছোট-বড় সাইজের বিভিন্ন দামের গরু সারিবদ্ধভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে। বাহাদুর এগ্রো ফার্মের ইনচার্জ সোহান বাহাদুর বলেন, বছর জুড়ে গো-খাদ্য দাম ও অন্যান্য খরচ বেশি থাকায় গরু লালন-পালনের ব্যয় আনেক বেড়ে গেছে এই বিবেচনায় গরুর কাঙ্খিত মুল্য পাব বলে আশা করছি। গরু মোটাতাজা করতে ধানের খর, কাঁচা ঘাস, খৈল, গমের ভুষি, ছোলা, ভাত, চালের কুঁড়া ইত্যাদি খাওয়ায়ে ৪০টি গরু তিনি অর্গানিক পদ্ধতিতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। সততা এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার শামীম জানান আমরা কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু লালন পালন করে আসছি, গতবছর করোনার কারণে বাজার খারাপ গেলও এবছর ইন্ডিয়ান গরু না আসাতে আমরা খামারিরা ভালো দামে বিক্রি করার আশা করছি। চাঁন মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বাবু কার্তিক হালদার (আকাশ) বলেন আমাদের স্কুল মাঠের অস্থায়ী গরুর হাঁটের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন শেষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির গরু আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া হটে আগত ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কোন ধরনের যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য এলাকাবাসী, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সহ হাট কমিটির সমন্বয় স্বেচ্ছাসেবক টিম ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিনরাত কাজ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ন্যায্যমূল্যে পছন্দের কোরবানির পশু কিনতে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তাপস কুমার ঘোষ জানান বাংলাদেশের কোরবানির ইদকে সামনে রেখে অবৈধভাবে সীমান্ত দিয় অন্যদেশের গরু যেন না আসতে পারে সেজন্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়াও হাটে স্টেরয়েড, হরমোন ব্যবহারের মোটাতাজাকরণ গরু না তুলতে পারে এবাং হাটে পশু সুস্থ রাখতে ও প্রয়োজনে চিকিৎসা পেতে পারে সেজন্য হাটগুলোতে মোবাইল কোর্ট সহ প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের ৪টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।