বগুড়ায় মাদকসেবীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইয়াবা ও হিরোইনের বিকল্প হিসেবে ব্যথা নাশক ও ঘুমের প্রিপারেশনের ট্যাপেন্টা পেনট্রাডল সেনট্রাডন সিনটা জাতীয় ট্যাবলেটের। বগুড়া জেলার পুলিশের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা পর ইয়াবা হিরোইন, ফেনসিডিল ব্যবসায়ী ও সেবীদের সংখ্যা কমে গেলও উঠতি মাদকসেবীদের কাছে ইয়াবা ও হিরোইনের দাম বেড়ে যাওয়ায় এইসব ট্যাবলেট কম দামে পাওয়ার কারণে মাদকসেবীদের কাছে খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাদকসেবীদের কাছে সহজলভ্য হওয়াতে তারা এগুলো প্রতি বেশি ঝুকে পড়েছে। স্থানীয় বাজারে এইসব ট্যাবলেটের চাহিদা ব্যাপক থাকাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী উচ্চ মূল্যে এইসব ট্যাবলেট বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদকসেবী এক যুবকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, জেলা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাদক ব্যবসা ঝিমিয়ে পড়ার কারণে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে আমার মত অনেকেই ট্যাপেন্টা পেনট্রাডল সেনট্রাডন ও সিনটা মত ট্যাবলেট গুলো বেছে নিয়েছে। এসব ট্যাবলেট জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসী গুলোতে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যথানাশক ওষুধ "টাপেন্টাডল হাইড্রোক্লোরাইড" ঔষধটি ৭/৮ নামি দামি কোম্পানি বিভিন্ন নামে ৫০,৭৫,১০০ মিঃগ্রাঃ ট্যাবলেট ও ডোজ হিসাবে বাজারজাত করছে। ব্যথা নিরাময়ের জেনেরিক ওষুধ ট্যাপেন্টাডলের চাহিদা বেশি দিনের আগের নয়। তিন চার বছর আগেও এটা বৈধ ওষুধ হিসেবে দেশের নামি দামি আট নয়টা ওষুধ কোম্পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাজারজাত করত। ২০২০ সালে ট্যাপেন্টাডল ওষুধ মাদকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করায় একে "খ" শ্রেনীর মাদকদ্রব্য হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের তফসিলে যুক্ত করা হয়। এরপর থেকে দেশীয় ভাবে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। নিষিদ্ধ হলেও ওষুধ টির ব্যবসা বন্ধ হয়নি। জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসীতে এই নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। স্বল্পদামের ওষুধ হওয়াতে শহর থেকে গ্রামগঞ্জে সবার অগোচরে এটি ছড়িয়ে পড়ছে। জেলা গোয়েন্দা সংস্থার বেশ কয়েকটি টীমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে বগুড়ার ঔষধের পাইকারি মার্কেট নামে খ্যাত খান মার্কেট ও নদী বাংলার প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি দোকানদার এই কাজের সাথে জড়িত। তাঁরা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাদকসেবীদের কাছে এই নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রি করে থাকে।
জেলার সুশীল সমাজ ও সুচিন্তিত নাগরিক নেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, বগুড়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনের অর্পিত দায়িত্ব অবহেলা কথা তুলে ধরেন। তাঁরা আরো জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসন এই নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রি বন্ধে জড়ালো ভূমিকা রাখতে পারলে নেশার এমন ভয়াল থাবা থেকে তরুণ প্রজন্ম রক্ষা করা সম্ভব হবে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ট্যাপেন্টাডল ও ইয়াবা দেখতে একই হয়ে এর মধ্যে ইয়াবার কোন উপাদান নেই। এটি আফিমযুক্ত এক ধরনের ব্যথানাশক ট্যাবলেট। ট্যাপেন্টাডল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের তফসিলে যুক্ত হওয়ার পর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলো ট্যাপেন্টাডল উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পুরাতন উৎপাদনের পর্যাপ্ত ওষুধ বাজারে রয়ে গেছে আর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ওষুধগুলো বৈধ। দেশের বাজারে চাহিদা হওয়ার কারণে ভারত থেকে চোরাই পথে ট্যাপেন্টাডল আমদানি করছে। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আরও জানান, আমাদের লোকবল কম হওয়ায় পরেও বিক্রি ও আমদানি বন্ধ কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা পুলিশের মিডিয়া ও মুখপাত্র ও সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম জানান, জেলা পুলিশের সুযোগ্য পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জেলা পুলিশের সব ইউনিট গুলোকে মাদক ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। নির্দেশনার প্রেক্ষিতেই জেলা পুলিশের সব ইউনিট মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, জেলা পুলিশ সাথে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। জেলা পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে সর্বদা তৎপর আছে এবং থাকবে।