একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসন জরুরি। বৈষম্য যত কমে আসবে ততই তা দেশকে এগিয়ে নেবে সমৃদ্ধির ধারায়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০২২ সালের 'গ্লোাবাল জেন্ডার গ্যাপ' প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আর এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ৬ ধাপ পিছিয়ে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ৭১ নম্বরে নেমে গেছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, গত বছর এই তালিকায় বাংলাদেশ ৬৫ নম্বরে ছিল। তার আগের বছর ছিল ৫০তম অবস্থানে। তবে এটাও বলা দরকার, এক বছরে অবস্থানের অবনতি হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। আমরা মনে করি, প্রতিবেদনের তথ্য আমলে নিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ- এটি ইতিবাচক হলেও, অবনতির বিষয়টি এড়ানো যাবে না এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, ডব্লিউইএফ তাদের এই লিঙ্গ সমতা সূচক প্রকাশ করে আসছে ২০০৬ সাল থেকে। সংশ্লিষ্টদের এটা বিবেচনায় নেওয়া দরকার, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ, শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন- মূলত এই চার মাপকাঠিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য বিবেচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সূচকে একটি দেশের অবস্থান নির্ধারণ করা হয় ১ ভিত্তিক স্কেলে, যেখানে ১ মানে হলো পুরো সমান অধিকার, আর শূন্য মানে পুরোপুরি অধিকার বঞ্চিত। এই হিসাবে বাংলাদেশের মোট স্কোর এবার ০.৭১৪, যা গত বছর ছিল ০.৭১৯। প্রথম বছরে, অর্থাৎ ২০০৬ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ০.৬২৭। এ ছাড়া এবারের সূচকে আগেরবারের মতোই শীর্ষে অবস্থান করছে আইসল্যান্ড, দেশটির স্কোর ০.৯০৮। আর 'সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের' দেশ আফগাস্তিানের স্কোর ০.৪৩৫। শীর্ষ দশের বাকি নয় দেশ হলো- ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, রুয়ান্ডা, নিকারাগুয়া, নামিবিয়া, আয়ারল্যান্ড ও জার্মানি। অন্যদিকে এ তালিকায় সবার নিচে অর্থাৎ ১৪৬তম অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান। ঠিক তার আগের অবস্থানে, অর্থাৎ ১৪৫ নম্বরে রয়েছে পাকিস্তান। এ ছাড়া ভারত ১৩৫, ভুটান ১২৬, মালদ্বীপ ১১৭, শ্রীলংকা ১১০, মিয়ানমার ১০৬ এবং নেপাল ৯৬তম স্থানে রয়েছে এবার। এই হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ায় নারী-পুরুষের ব্যবধান বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও লিঙ্গ সমতায় ব্রাজিল, চীন, জাপানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন এবং অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে যেতে হলে নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ যেমন গ্রহণ করতে হবে, তেমনিভাবে তার যথাযথ বাস্তবায়নেও কাজ করতে হবে। এটা ঠিক, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যেমন হচ্ছে, তেমনি কর্মক্ষেত্রেও নারীরা কাজ করছে। এ ছাড়া নারী তার নিজ যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে। তদুপরি বৈষম্য আছে- যা নিরসনে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ্য, রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান গত বছর ছিল সপ্তম। এবার দুই ধাপ পিছিয়ে নবম স্থানে নেমে এসেছে, যদিও স্কোর আগের মতোই ০.৫৪৬ রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ গতবারের ১৪৭তম অবস্থান থেকে ছয় ধাপ এগিয়ে ১৪১তম অবস্থানে উঠে এসেছে। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য আরও বেড়েছে, সূচকের ১২১তম স্থান থেকে বাংলাদেশ নেমে গেছে ১২৩তম স্থানে। স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, এদিক দিয়ে বাংলাদেশ ১৩৪ থেকে উঠে এসেছে ১২৯তম স্থানে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সর্বোপরি বলতে চাই, এটা বিবেচনায় নেওয়া দরকার, ডবিস্নউইএফ বলছে, ২০২২ সালে নারী-পুরুষ বৈষম্য ৬৮.১ শতাংশ পর্যন্ত কমানো গেছে। এই ধারায় এগোলে বিশ্ব থেকে লিঙ্গবৈষম্য দূর হতে ১৩২ বছর সময় লাগবে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে, বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসনে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং তার বাস্তবায়নে কাজ করা। ২০২২ সালের 'গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ' প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ৬ ধাপ পিছিয়ে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ৭১ নম্বরে নেমে গেছে- এটিকে আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।