নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্ত্রী রানী আক্তার কর্ত্তৃক চতুর্থ স্বামী আনোয়ারুল ইসলাম মনির লিঙ্গ কর্ত্তনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটি ঘটেছে গত ১৯ জুন বিকেলে শহরের অদুরে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চৌমহনী বাজারে। প্রথমে ওই আনোয়ারুল ইসলাম মনিকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার গোপনাঙ্গে ৮ টি সেলাই দেয়া হয়েছে বলে চিকিৎসক জানান। বর্তমানে সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হাসপাতালের থেকে বাসায় এসেছে।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানায় স্ত্রী,শ্বাশুরী ও শ্যালিকাকে আসামি করে মামলা করেছে স্বামী আনোয়ারুল। গত ২৭ জুন তিনি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ২২।
লিঙ্গ কর্ত্তনের বিষয়ে আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তার বাড়ী বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাসকান্দর চেংমারী পাড়ায়। তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। পেশায় তিনি একজন টিভি মেকার। দোকানে তার সাথে ওই মহিলার পরিচয় হয়। এরপর থেকে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সময় ওই মহিলা আমাকে বলে তার বিয়ে হয়নি। সে একজন ভাল ছেলে খুঁজছে। তার অনেক সম্পত্তি রয়েছে। মা ও বোনকে নিয়ে সে সৈয়দপুরে থাকে। যে বাসায় থাকে তিনি নাকি তার মামা। এভাবে কত কথাই না বলে যায়।
এক পর্যায় সে প্রায় সময় আমার দোকানে আসে। আমার স্ত্রী সন্তান আছে তা জানার পরও সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এভাবে তার সাথে আমার একটা সম্পর্ক হয়। ওই সম্পর্ক থেকে ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি আমরা পালিয়ে বিয়ে করি। কাবিন নামায় তার নাম দেয় রানী। পিতার নাম শরিফ উদ্দিন, মাতা মৃত মর্জিনা। ঠিকানা দেয় পুরাতন বাবুপাড়া সৈয়দপুর,নীলফামারী। বিয়ের দেন মোহর করা হয় ৬ লাখ টাকা। রানী বিয়ের রেজিস্ট্রারে লিখে সে অবিবাহিত।
বিয়ের পর প্রতিদিন দিনের বেলায় সে কোথায় যেন যায়। আর রাতে এসে আমার সাথে থাকে। আমি লক্ষ্য করি সে রাতে কেন যেন ছটফট করে। কার কার সাথে মোবাইলে কথা বলে। আমি রাগ হলে সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তখন তার প্রতি আমার সন্দেহ দানা বাঁধে।
হঠাৎ একদিন এক ভদ্রলোক আমার দোকানে আসে। পরিচয় হয় আমার সাথে। বলে আপনি যাকে পালিয়ে বিয়ে করেছেন সে আমার স্ত্রী। তার নাম সারজিনা। মায়ের নাম মমতাজ বেগম। পিতা সারফরাজ মন্ডল। বাড়ী দাগলাগঞ্জ দোলাপাড়া পার্বতীপুর।
আমার একটি ৬ বছরের মেয়ে ও ৩ বছরের একটি শিশু ছেলে রয়েছে। বাচ্চা দুটি সব সময় মা মা বলে কাঁদছে। আমি বড় বিপদে আছি শিশু দুটিকে নিয়ে। বিশ্বাস না হলে আমার সাথে দেখে আসেন।
তার কথায় আমি মর্মাহত হয়ে যাই। কিন্তু নামের সাথে তো মিল নেই। নাম তো আলাদা। তারপরও আমি তার সাথে যাই। গিয়ে দেখি সত্যি কথা। শিশু দুটিকে দেখে আমার চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। কাঁদছে মা মা বলে।
আনোয়ারুল জানায় সে নিজ নাম,জীবিত মায়ের আলাদা নাম দিয়ে মৃত বানিয়ে এবং ঠিকানা ভুয়া দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে। উদ্দেশ্য বিয়ে নামে দেনমোহর আদায় করে চলে যাওয়া।
পরে জানতে পারি তার তৃতীয় স্বামী মাহমুদ আলম। বাড়ী জোতসাতনালা চিরিরবন্দর দিনাজপুর। সেখানে তার দুটি শিশু বাচ্চা আছে।
সেখানে বিয়ে করে সারজিনা নাম দিয়ে। বয়স দেয়া হয় ৩৫ বছর। পিতার নাম দেয় সারফরাজ মন্ডল। মাতার নাম দেয় মমতাজ বেগম। ঠিকানা দেয় দাগলাগঞ্জ দোলাপাড়া পার্বতীপুর। তার সাথে বিয়ে হয় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ। দেনমোহর ছিল তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। সেখানে জন্ম তারিখ দেয় ১২/০৪/১৯৮৪। আর আমার সাথে বিয়ের সময় জন্ম তারিখ দেয় ০৬/০৬/১৯৯৪।
আমি এ বিষয়টি তাকে বললে সে বলে আমি তার স্ত্রী না। আমি বলি নাম আলাদা হলেও ছবি তো আলাদা নয়। তোমার ছবি তো ওর ঘরে।পরে সে আমাকে বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সংসারে শান্তি রক্ষায় বিষয়টি আমি চেপে যাই।
তার তৃতীয় স্বামী মাহমুদ আলম জানান,সে বহুরুপি নারী। তার কাজ হল টাকা আছে এমন মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে দেনমোহর আদায় করা। সহজে না দিলে মামলা করা। তিনি বলেন তার আসল নাম কি জানি না। তবে ভোটার আইডিতে দেয়া আছে সারজিনা। স্বামী লিটন। তার প্রথম স্বামীর নাম সাইদুল ইসলাম ড্রাইভার। সেখানে রয়েছে ১ ছেলে। ওই সন্তান ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে গোলাহাট এলাকার লিটন নামে এক লোককে। সেখানে রয়েছে দুই ছেলে। তাকে ছেড়ে এসেছে আমার সাথে। বিয়ের কাবিননামায় লিখে সে কুমারী। বিয়ের পর আমি এসব জানতে পারি। আমার সাথে বিয়ে হয়ে সে আমার পরিবারকে মামলায় জড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করে নেয়।
আনোয়ারুলের সাথে সংসার করে রাতে আর দিনে আমার কাছে এসে বলে তুমি আমার স্বামী টাকা দাও। আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। এ কেমন নারী। তার অত্যাচারে আমার পরিবার অতিষ্ট্। বর্তমানে আমি শিশু বাচ্চা দুটিকে নিয়ে বড় কষ্টে আছি।
লিঙ্গ কর্ত্তনের বিষয়ে আনোয়ারুল বলেন,ওইদিন সে তার মা ও বোন মিলে প্রায় দুই ঘন্টা কী যেন বৈঠক করে। এরপর ভাড়া বাসার মেইন দরজায় দুটি তালা মারে। এ সময় আমার সন্দেহ হয়। গেটে তো কোনদিন দুটি তালা মারা হয় না। আজকে কেন তালা মারা হল। এরপর বাসার সবকটা বাতি বন্ধ করলো। রানী ঘরে এসে আমাকে কেন যেন খুব আদর করতে লাগলো। আমি তাকে বললাম আজকে কি হয়েছে এত আদর যতœ কেন। সে বললো একটু পরে সব বুঝতে পারবে। এ কথা বলার সাথে সাথেই আমার লিঙ্গে ব্লেড মেরে। আমি চিৎকার করলে তার মা ঘরে এসে রক্ত দেখে চুপচাপ থাকে। তারা কেন যেন আতংকবোধ মনে করছে। তাদের ধারণা আমি মরে যাব। কিন্তু আল্লাহ আমাকে রক্ষা করছে।
এ ব্যাপারে রানী বলেন আমি তার লিঙ্গ কর্ত্তন করি নাই। সে আমাকে ফ্যাসানোর ষড়যন্ত্র করছে। আমি কাটলে পুরোটাই কাটতাম অর্ধেক নয়।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে আর এম ও মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন আংশিক লিঙ্গ কর্ত্তন অবস্থায় আনোয়ারুলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাসায় এসে স্বামী আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে স্ত্রী রানী আক্তার ওরফে সারজিনা,শ্বাশুরী মর্জিনা বেগম ও শ্যালিকা শিলা খাতুন ওরফে সার্জিকে আসামি করে সৈয়দপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় দুইজন আসামীর জামিন হলেও মুল আসামি রানীর জামিন না মঞ্জুর করে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠায়।