খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলিতে সরকারি নিয়ম নীতি মোতাবেক আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা ব্যাতিরেকে অনেকটা গোপনীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন।
দিঘলিয়া উপজেলায় রয়েছে ১৬ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪ টি কলেজ, ১টি দাখিল মাদ্রাসা। ১৬ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪ টির নিয়মিত কমিটি গঠিত হয়েছে। সেনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী চলছে। স্টার জুট মিলস মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিজেএমসি কর্তৃক পরিচালিত হয়। ৪ টি কলেজের মধ্যে ৩ টিতে ইতোমধ্যে নিয়মিত কমিটি হয়েছে। বাকী ১টি সরকারি এমএ মজিদ ডিগ্রী কলেজ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী চলমান রয়েছে।
দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা হচ্ছেন দিঘলিয়া এমএ মজিদ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খান নজরুল ইসলাম, সুগন্ধী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোল্যা মাকসুদুল ইসলাম, ফাতেমা মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রফেসর ডাঃ রেজিনা হামিদ, বারাকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেল, আড়ুয়া উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যাপীটে চৌধূরী ওয়াদুদ হোসেন, গাজীরহাট হাজী নৈমুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোঃ হামিম মোল্যা, লাখোয়াটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গাজী জাকির হোসেন, হাজী ছায়েমউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কামালউদ্দিন সিদ্দিকী হেলাল, এ্যাপেক্স মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ফারহানা নাজনীন, সেনহাটী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে মোসাঃ শামসুন নাহার, নন্দনপ্রতাপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিত্যানন্দ রায়, এ কে এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সমরেন্দ্রনাথ হালদার, পথেরবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোল্যা আকরাম হোসেন, আয়াতুননেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে খান নজরুল ইসলাম, পানিগাতী হাছেনিয়া দাখিল মাদ্রাসায় শাকিরুল হামিদ।
৩ টি কলেজের নিয়মিত কমিটির সভাপতি হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা হলেন আলহাজ¦ মোল্যা জালালউদ্দিন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মোল্যা জালাল উদ্দিন, আলহাজ¦ সারোয়ার খান ডিগ্রী কলেজে শেখ মুনীর আহমেদ, এস এম মোস্তাফা রশিদী সুজা মহিলা কলেজে মরহুম এস এম মোস্তাফা রশিদী সুজার কন্যা শিন্মী সানজিদ রশিদী।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে কমিটি গঠনে স্বচ্ছ প্রক্রিয়াসহ নির্বাচনে শিডিউল ঘোষণার পর যথাযথ প্রচার না করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে কমিটিতে আসতে যোগ্যতাসম্পন্ন আগ্রহী অনেকেরই আশাভঙ্গ হয়েছে। যাদের উপর প্রচারের এই দায় বর্তায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষকরা বলছেন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ এবং নীতিমালা মেনেই আমরা প্রচারণা চালিয়েছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদপূর্ণ হওয়ার কমপক্ষে ৮০ দিন পূর্বে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। এ সময় খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুতপূর্বক নাম সংশোধের জন্য শ্রেণীকক্ষে জানিয়ে দেওয়ার এবং বিদালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রচারণা চালাবেন। নীতিমালা অনুযায়ী তিনি শ্রেণীকক্ষে নির্বাচনের সিডিউল নোটিশ জানিয়ে দিবেন। স্থানীয় বহুল প্রচারিত একটি পত্রিকায় নির্বাচনের সিডিউলের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া প্রচারনার জন্য এলাকায় মাইকিং করার বিধানও রয়েছে। কমিটি গঠনে দলীয় প্রভাব, এলাকার প্রভাবশালীদের প্রভাব, বংশীয় প্রভাব এবং প্রতিষ্ঠাতা ক্যাটাগরিদের প্রভাবসহ নানাবিধ প্রভাবের কারণে অনেক বিদ্যালয়ে অযোগ্য এবং স্বল্প শিক্ষিত ব্যক্তিরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে চলে আসেন। ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয়গুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ রয়েছে অনেক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে প্রধান শিক্ষকগণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে এবং তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানকে সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অপরদিকে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ মনোপুত সভাপতি নির্বাচন করতে পেরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করতে সুবিধা হয়। আর এমন অভিযোগ রয়েছে দিঘলিয়ায় গণমানুষের মুখে মুখে, পত্রিকার পাতায়।
মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সরকারি যে নীতিমালা রয়েছে তাতে দেখা যায় তিনটি ক্যাটাগরিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়োগ করা যাবে। প্রথমত, নির্বাচিত সদস্যদের (দাতা, প্রতিষ্ঠাতা, অভিভাবক শ্রেণি)। এদের ভোটের মাধ্যমে যে কেউ একজন সভাপতি নির্বাচিত হবেন। দ্বিতীয়ত, শিক্ষানুরাগী, খ্যাতিমান সমাজসেবক, বিশিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের মধ্য থেকে কেউ সভাপতি প্রার্থী হতে পারবেন। তৃতীয়ত, সরকারি আধা-সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত (দ্বিতীয় শ্রেণীর নীচে নয়) এমন কোন ব্যক্তি সভাপতি প্রার্থী হতে পারবেন। এ ছাড়া কমিটি গঠনের ৬ মাস পূর্বে বিদ্যালয়ের ফান্ডে এককালীন নগদ ২০ হাজার টাকা অনুদান সাপেক্ষে ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য হিসেবে অর্ন্তভূক্ত হতে পারবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক পাশ করা হলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন বিধান নেই। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং সদস্য হিসেবে অল্পশিক্ষিত এবং স্বাক্ষরজ্ঞানবিহীন ব্যক্তিরা কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন।
এছাড়া অনেক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাধারণ শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগে মোটা অংকের বাণিজ্য করে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি একটি বিদ্যালয়ে একটি নিয়োগকে কেন্দ্র করে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতির মধ্যস্থতায় ৫ থেকে ৮ লাখ টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য হয়েছে বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়।
কমিটি গঠনের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দিঘলিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কোন প্রকার ভয়-ভীতি, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে শতভাগ পরিচ্ছন্ন এবং নিরপেক্ষভাবে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনগুলোর সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করেছি। এ নিয়ে কোথাও কোন বিতর্কের সৃষ্টি হয়নি। তবে দিঘলিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে কমিটি গঠনে অনিয়ম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়ম, দুর্ণীতি ও শিক্ষক নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য ও নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।