খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ২০০২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট, যশোর জেলার অভয়নগর এবং খুলনা জেলার ডুমুরিয়া, রূপসা, তেরখাদা এবং দিঘলিয়ার অধিকাংশ এলাকা মাস্টার প্ল্যানের আওতাভুক্ত করে। এর আগে একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর গৃহায়ন
ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে বিষয়টি দীর্ঘদিন পরেও এলাকাবাসী অবহিত না হওয়ায় ভবণ নির্মাণে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিজ্ঞমহলের জিজ্ঞাসা আমাদের এলাকায় কিছু হবে কিন্তু আমরা জানবো না এটা কোন ধরণের প্লান বা প্রকল্প? বিগত বিএনপি আমলে দিঘলিয়া ও ফুলতলা উপজেলার ভূমি উন্নয়ন কর নিয়ে দৌড়-ঝাপ শুরু হয়েছিল প্রশাসন, রাজনীতিক, সাংবাদিক, স্বেচ্ছাসবী সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের মাঝে। জাতীয় সংসদে আলোচনাও হয়েছিল।জাতীয় সংসদের খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য জামায়াত নেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সংসদে বিল উণ্থাপন করেছিলেন। খাজনা সমতাও হয়েছিল। ঠিক সেই সময় দিঘলিয়া ও ফুলতলাকে বাড়তি ভূমি উন্নয়ন কর বহাল রেখে পৌরসভায় উন্নীত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দিঘলিয়া ও ফুলতলার অধিকাংশ শ্রমজীবি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে সেদিন পৌরসভা করা হয়নি। এরপর খুলনায় অর্থনৈতিকভাবে ঘটে গেছে অনেক ছন্দ পতন। কাঁচাপাট শিল্প ধ্বংস হয়েছে। যেখানে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতো। অন্য দিকে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসহ কয়েকটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জুটমিল পুরাপুরি সরকারিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে মিলগুলোতে আনুমানিক অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এ সকল কর্মহীন শ্রমিক পরিবার কর্মক্ষেত্র হারিয়ে এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছে। এখনও গড়ে ওঠেনি কর্মহীন মানুষের নব নব কর্মক্ষেত্র। নেই কোনো পরিকল্পনাও। বন্ধ মিলগুলোর মেশিনপত্র বিকল হয়ে পড়লেও বেসরকারিভাবে চালু করা সুদূর পরাহত।
কেডিএ বলছে, গেজেট প্রকাশ এবং এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের মাধ্যমে এবং পত্রিকায় প্রকাশের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের ব্রক্ষগাতী গ্রামে আউব সর্দার এর ছেলে হাফিজ সর্দার ব্রক্ষগাতী মৌজার হাল দাগ নাম্বার ২৪২১(অংশ) এর উপর ৫০ ফুট বাই ৩০ বর্গফুটের একতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। চলতি মাসের ৭ জুলাই খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কেডিএ’র অথরাইজড অফিসার জি এম মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বাড়ি নির্মাণকারী মোহাম্মদ হাফিজ সরদারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। যাহার স্মারক নম্বর ২৫.৪১.০০০০.০১২.৯৯.০০৩.২০.১০৭।
চিঠির বিষয়বস্তু ছিল ১৯৫২ সনের সংশোধিত ইমারত নির্মাণ আইন (১৯৮৭) সনের ১২ নং আইন অনুযায়ী অনুমোদনবিহীনভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা ও অননুমোদিত নির্মাণ কাজ কেন ভেঙ্গে ফেলা হবে না সে সম্পর্কে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলো।
আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিবদ্ধ আইনের (১৯৫৩ সনের ২নং ইবি আইন) অন্তর্ভুক্ত ধারার খেলাপ করে একতলা ইমারত নির্মাণ কাজ করেছেন যাহা বিধিবদ্ধ আইনের ধারা মতে দন্ডনীয় অপরাধ।
যেহেতু আপনি উপর্যুক্ত অননুমোদিত নির্মাণ কাজ করেছেন সেহেতু বিধিবদ্ধ নির্মাণ কাজ (একতলা উপর দোতলা) বন্ধ রাখার জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। ইতঃপূর্বে নির্মিত কাজ ভেঙ্গে ফেলার জন্য কেন আদেশ প্রদান করা হবে না তা ৩১ জানুয়ারীর মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
অন্যথায় ১৯৫২ সনের সংশোধিত ইমারত নির্মাণ আইন (১৯৮৭) সনের ১২ এর ধারা অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্রক্ষগাতীর মোঃ হাফিজ সর্দার শুধু নয়, একই রকম চিঠি দিঘলিয়া থানার সামনে নির্মাণাধীন সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাশির আহন্মেদ সহ বাড়ি নির্মাণকারী এমন অনেক মালিকের কাছে ডাকযোগে পাঠিয়েছে। চিঠির বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ, ক্ষোভ, অস্থিরতা বিরাজ করছে।
অপরদিকে, দিঘলিয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মাস্টার প্ল্যানের আওতাভুক্ত হওয়া এগারটি মৌজায় বসবাসকারী মানুষগুলো আওতাভুক্তের বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এমনকি এলাকার জনপ্রতিনিধি, সামাজিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক এবং উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে অবহিত নন। তা হলে এতবড় সিদ্ধান্ত কেডিএ কাদের জানিয়ে করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে। কারণ এ যেন কর্তৃপক্ষের একক সিদ্ধান্ত। এলাকার বিজ্ঞমহলের অভিমত কর্তৃপক্ষের এত ভালো ভালো নয়। মানুষের কর্মক্ষেত্র আগে গড়ুন রাস্তা-ঘাট যা আছে তাই মানুষের ঢের। সামান্য কৃষি জমি ধ্বংস করে বিলাসবহুল কল্পনা মানুষকে সুখি করতে পারেনা বরং কষ্ট দেয় ঢের। যেমন কষ্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া অজান্তে সৃষ্টি, কষ্ট দেওয়া ও হয়রানি করা শুরু।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলমের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০০২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দিঘলিয়া উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে ১১ টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র মাস্টার প্ল্যানের আওতাভুক্ত করা হয়েছে এ-সংক্রান্ত কোন তথ্য আমার জানা নেই।
একই ধরণের মন্তব্য করেন দিঘলিয়া উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান খান নজরুল ইসলাম ও বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম। দিঘলিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হায়দার আলী মোড়ল বলেন, বিষয়টি আমরা লোক মুখে শুনেছি কিন্তু এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আমরা হাতে পায়নি। সেনহাটি ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি মোটেও অবগত নই।
চিঠি পাঠানোর সত্যতা এ প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চত করেছেন কেডিএ’র অথরাইজড অফিসার জিএম মাসুদুর রহমান। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কেডিএ’র মাস্টার প্লানের আওতাভুক্ত এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে হলে কেডিএ’র ছাড়পত্র, নকশা এবং অনুমোদন ছাড়া কোন ইমারত নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।
কেডিএ’র পরিকল্পনা অফিসার মোঃ তানভীর আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, তৎকালীন সময়ে ওই এলাকায় জরিপ কাজ করাসহ অন্যান্য সকল বিষয়ে নিয়মানুযায়ী সকলের সাথে সভা ও সেমিনার করে ওই এলাকার মাস্টার প্ল্যান করা হয়। যা সরকার কর্তৃক যথাযথ নিয়ম মেনে গেজেট প্রকাশ করা হয়। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার প্রাণপ্রিয় সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের উপদেষ্টা দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ শিরিন ময়না ও অপর উপদেষ্টা ও সুগন্ধি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোল্লা মাকসুদুল ইসলাম ও সেনহাটি উন্নয়ন সমাজকল্যান পরিষদের আহ্বায়ক এম সিদ্দিক উজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা শুধু দিঘলিয়ায় কাজ করিনা। খুলনার সর্বত্র আমাদের বিচরণ। আমরা কখনও জানতে পারিনি কেডিএ' র মাষ্টার প্লানের কথা