এক সময়ের অবহেলিত এলাকা হিসাবে পরিচিত বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় অনেক পাড়াগাঁয়ের মাটির রাস্তাগুলো এখন পিচঢালা। দু’পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ আর একটু পরপর সবুজ ছায়াঢাকা গ্রাম। গ্রামের বাড়িগুলো বেশিরভাগই টিনের। ইটের দু-চারটি ঘরের সঙ্গে মাটির ঘরও চোখে পড়ে মাঝেমধ্যে।
এমনি এক গ্রাম শেখের মারিয়া। নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের এ গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে একসঙ্গে অনেকগুলো লাল-নীল-সবুজ রঙের পাকাঘর। ওই গ্রামে ৩০ টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার আলপুনিয়া, বর্ষন, কুন্দারহাট, সিংজানিসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এইসব ঘর নির্মাণে প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তৈরি হয়েছে এসব ঘর।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে নন্দীগ্রাম উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারমুক্ত ঘোষণা করবেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যারা ঘর পেয়েছেন তাদের কেউ এতদিন থাকতেন অন্যের জায়গায় ঘর তুলে। কেউ ছিলেন খাস জমিতে। এ আশ্রয়ণ প্রকল্প তাদের দিচ্ছে আপন ঠিকানা। নিজের জায়গায় নিজের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তাই তাদের মনে নতুন স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। এই স্বপ্নের ঘরে ঠাঁই পেয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা) দুলাল প্রামানিক। সমাজে তাদের অপায়া ভেবে দুরে সড়িয়ে দেয়। এদের বেঁচে থাকার তাগিদেই তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষেরা বাজার থেকে সবজি তোলা, দোকান থেকে ১০-২০ টাকা নেয়া, বিয়ে বাড়িতে নেচে-গেয়ে কিছু টাকা নেয়া-এভাবেই তাদের জীবন জিবিকা নির্বাহ করে। তাতেও আপত্তির শেষ নেই। বেঁচে থাকাই যেন বিষাদময়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও অধিকার আছে, এমনটা পরিবার ও সমাজের কারোই দৃষ্টিতে নেই। তবে এই অভাগিদের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষে তাদের পাকা ঘর ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুই শতক জমির মালিকানার সঙ্গে এই বাড়িতে থাকছে দুটি করে শোয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর, একটি শৌচাগার, বারান্দা, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও নিরাপদ পানির জন্য নলকুপ।
পুনর্বাসিত হিজড়া দুলাল প্রামানিক বলেন, সমাজের মানুষের অবহেলা, তাড়িয়ে দেয়া ও নির্যাতনের কথা। বাঁচার ইচ্ছে হতো না। এখন নতুন জীবন পেয়েছেন। নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ভালোবাসেন। তাকে দোয়া করি, প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘজীবী হোন। ঘরে ঘরে আমাদের মতো অসহায়ের সহায় হোন।
ছাবিনা ইয়াসমিন জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার তার চোখে নতুন আশা জাগিয়েছে। সেই আশা একটু ভালো জীবনের। সুন্দর জীবনের। জীবনেও ভাবেননি নিজের এমন সুন্দর ঘরে থাকতে পারবেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার (পিআইও) আবু তাহের জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও একটি পৌরসভার মেয়রের তথ্য মতে ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জানতে পেরেছি বর্তমান সরকারের গৃহহীন পরিবারমুক্ত প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের পুনবার্সনে নন্দীগ্রামে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার নেই। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অন্যান্য এলাকাসহ এখানেও আজ ২১ জুলাই ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করবেন। পিআইও আরো জানান, গৃহহীন প্রকল্পের আওতায় নন্দীগ্রাম উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৫৬ জন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮০ জন এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১৬৮ জন গৃহহীন পরিবার জমিসহ নতুন বাড়ি পেয়েছেন। সব মিলে নন্দীগ্রাম উপজেলায় বাড়ির সংখ্যা ৪০৪ টি। পরবর্তিতে গৃহহীন পরিবার খুঁজে পেলে তাদেরও বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে উপজেলার সব গ্রামে খোঁজ নিয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার এখন আর খুঁজে পাওয়া যায়না।
এবিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিফা নুসরাত বলেন, ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এই উপজেলায় ৪০৪ টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। আর এর মাধ্যমে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হতে যাচ্ছে নন্দীগ্রাম। এদিকে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। সে ধারাবাহিকতায় তাদের পুনর্বাসনের কাজ চলছে।