জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবন মাসেও তেমন বৃষ্টির দেখা মিলছেনা বরিশালে। ফলে ভরা মৌসুমেও বরিশালের নদ-নদীতে দেখা মিলছেনা রুপালী ইলিশের। অথচ এই সময়ে মৎস্য আড়তগুলোতে ইলিশে সয়লাব থাকার কথা থাকলেও সাগর মোহনা থেকে কিছু ইলিশ আসছে। যা বরিশালের বাজারে নয়; পাইকারদের হাতঘুরে তা চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
রোববার সকালে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাগরে সবধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ২৩ জুলাই। বর্তমানে সাগরে মাছ শিকার শুরু হয়েছে। ফলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বরিশালের বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ আশার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখনও তেমন বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ফলে ইলশেগুড়ি বৃষ্টির অভাবে বরিশালের নদ-নদীতে ইলিশের শুন্যতা দেখা দিয়েছে। বরিশালের সবচেয়ে বড় ইলিশ মোকাম নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার ইলিয়াছ হোসেন বলেন, অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে এই মুহুর্তে ইলিশ শিকারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই এ সময়ে মোকামে প্রতিদিন হাজার মণের অধিক ইলিশ আসার কথাছিলো। কিন্তু তা আসছেনা। স্থানীয় নদ-নদীর কিছু ইলিশ মোকামে আসলেও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় দাম চড়া। তিনি আরও বলেন, সাগরে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জেলেরা মাছ শিকারে নেমেছে। তাই আশা করা যাচ্ছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মোকামে ইলিশ আশা শুরু করবে।
অপর আড়তদার নাসির উদ্দিন বলেন, অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে সারাবছরই কম-বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে প্রতিবছর এ সময় শত শত মণ ইলিশে সয়লাব থাকতো বরিশালের ইলিশ মোকাম। ইলিশ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটতো পাইকার, আড়তদারসহ শ্রমিকরা। কিন্তু চলতি ভরা মৌসুমে বরিশালের মোকাম ইলিশ শুন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার সকালে অভ্যন্তরীণ নদী এবং সাগর মোহনায় জেলেদের জালে ধরাপরা মাত্র ১২ মণ ইলিশ দুটি ট্রলারে ভোলার চরমোন্তাজ থেকে এসেছে বরিশালের মোকামে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় তার দাম ছিল বেশ চড়া।
রোববার বরিশালের মোকামে সাড়ে ছয়শ’ থেকে নয়শ’ গ্রাম (এলসি) সাইজ প্রতিমণ ইলিশ ৪৮ হাজার, এক কেজি সাইজের প্রতিমণ ৬০ হাজার, এক কেজি চারশ’ গ্রাম সাইজের প্রতিমণ ৮০ হাজার এবং দেড় কেজি সাইজের প্রতিমণ ইলিশ ৯০ থেকে ৯২ হাজার টাকায় পাইকরী বিক্রি হয়েছে।
ইলিশ ক্রেতা তানভির আহম্মেদ অভি বলেন, ভরামৌসুমে ইলিশের যে দাম থাকা উচিত ছিলো তার চেয়ে দাম অনেক বেশী। এই মুহুর্তে ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। চড়া দাম হওয়ায় বরিশালের মানুষ এখন ইলিশের স্বাদ ভুলে যেতে বসেছে।
জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মোঃ রিপন বলেন, সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া ট্রলারগুলো ফিরে আসলে ইলিশের সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি দামও কমবে। জেলা মৎস্য কমকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এমনিতেই তীব্র গরম, তার উপর নদীতেও পানি কম। এ কারণে সাগরের মাছ নদীতে আসছে না। তাই জেলেদের জালে ইলিশও ধরা পরছেনা। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পরবে জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তখন জেলে, আড়তদার ও শ্রমিকদের মুখে হাঁসি ফুটে উঠবে। বাজারেও ইলিশের দাম সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালে চলে আসবে।