রাম- রাবণের যুদ্ধে বিভীষণ আপন ভাইয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ছিল। এমন চিত্র দেখা দিয়েছে বাউফলের নাজিরপুর-তাঁতেরকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) উপ-নির্বাচনে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেই আওয়ামী লীগের একাংশ। অভিযোগ উঠেছে বিদ্রোহী প্রার্থীকে মদদ দেওয়ার। এ যেনো ঘরের শত্রু বিভীষণ।
তথ্য মতে, আগামী ২৭জুলাই নাজিরপুর-তাঁতেরকাঠি ইউপি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম ফারুক, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী চশমা প্রতীক নিয়ে এস.এম মহসিনসহ ৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
ভোটের মাঠে নৌকার পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ এমপি নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নৌকার পক্ষে কাজ করলেও মাঠে নেই পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান নেতৃতাধীন আওয়ামী লীগের অপর অংশ।
অভিযোগ উঠেছে, জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও বাউফল পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারে মদদে এস.এম মহসিন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে। তারা প্রতক্ষ্যভাবে নৌকার বিরোধিতা করছেন। প্রকাশ্য বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কোন সভায় অংশ না নিলেও তাদের কর্মী সমর্থকেরা বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, স্থানীয় সাংসদ আ.স.ম ফিরোজের সাথে মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতলেব হাওলাদারের সাথে প্রকাশ্য বিরোধ চলছে। নৌকার প্রার্থী ইব্রাহিম ফারুক আ.স.ম ফিরোজ এমপির অনুসারী হওয়ায় ওই দুই নেতা নৌকার বিরোধিতা করছেন।
আওয়ামীলীগের একাংশের নৌকা বিরোধিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী মো. আলমগীরসহ জেলার নেতা। গত শুক্রবার (২২জুলাই) নাজিরপুরে এক নৌকার উঠান বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা নৌকার বিরোধিতা করছেন তাদের মাশুল দিতে হবে।
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন,‘ বিদ্রোহী প্রার্থী এস.এম মহসিন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েলের অনুসারী। তার মদদেই মহসিন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও উপজেলা পরিষদ ভাইস-চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেন খাঁন স্বদেশ প্রতিদিনকে জানান, দলীয় গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারার ১১উপ-ধারায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এস.এম মহসিনকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক মোতালেব হাওলাদার এ বহিষ্কারের বিরোধিতা করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীকে মদদ দিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, নৌকার পক্ষে উঠান বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারন সম্পাদকসহ জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার উপস্থিত হননি। এতে প্রমাণ হয় তিনি নৌকার বিরোধিতা করেন।
এদিকে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছে নৌকা প্রার্থী ইব্রাহিম ফারুক। দিন রাত চলছে প্রচার প্রচারণা। বিভিন্ন উঠান বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলার নেতারা নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। মাঠে কাজ করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
নৌকার প্রার্থী মো. ইব্রাহিম ফারুক বলেন, কোন ষড়যন্ত্রই নৌকার বিজয় ঠেকাতে পারবে না। নাজিরপুর-তাঁতেরকাঠির জনগণ নৌকার আছে। নৌকার বিজয় নিশ্চিত।
এবিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েলের মুঠোফোনে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন,‘ আমি কখনো নৌকার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলিনি। আর নৌকার বিরুদ্ধে বলবো কেনো, আমি তো নৌকার পক্ষে।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন,‘ যারা নৌকা বিরোধিতা করছেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীকে মদদ দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’