জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বাজারে সবজির দাম মোটামুটি বাড়লেও কাঁচা মরিচের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। গত তিন-চারদিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম ডাবল সেঞ্চুরি হয়েছে। এদিকে কাঁচা মরিচের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ক্রেতারা নাভিশ্বাস চরমে পৌঁছেছে। দাম বৃদ্ধির কারণে বাজারে প্রতিনিয়ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে কথা কটাকাটির ঘটনা ঘটছে। এমকি দুই-এক স্থানে হাতাহাতিও ঘটনা ঘটে।
বিক্রেতারা বলছেন, দেশে তীব্র তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমের কারণে এলাকার প্রচুর পরিমান কাঁচা মরিচের গাছ নষ্ট হয়েছে। এজন্য বাজারে মরিচ কম আসছে। তাই কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেছে। তবে ক্রেতারা কেউ কেউ বলছেন, দেশে কোন ছোট-খাটো দুর্যোগ বা সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হলেই সবজির দাম হুট করে বাড়ে দেয়। এত করে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
সরেজমিনে উপজেলার কালাইহাট, মোলামগাড়ীহাট, মাত্রাইহাটসহ, কালাই পৌরসভা, উদয়পুর, পুনট ও আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ১শ গ্রাম কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায় আর ২শ গ্রাম কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। টাকার হিসাবে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম পড়ছে ২০০ টাকা। আর ভারতীয় কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১শ ৯০ থেকে ১শ ৯৫ টাকার কেজি দরে। উপজেলার হাটবাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচা বাজারের রাজা এখন কাঁচা মরিচ। ঐসব হাট-বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ২শ টাকায়। কাঁচা মরিচের দাম ডাবল সেঞ্চুরি হওয়ার কারণে স্বল্প আয়ের ক্রেতারা ২৫, ৫০, ১শ এবং সর্বোচ্ছ ২শ ৫০ গ্রাম করে কাঁচা মরিচ কিনছেন ঐসব খুচরা বাজার থেকে। অন্যদিকে মরিচের সঙ্গে দাম বেড়েছে শসা, বেগুন, করলা, পটোল, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স। প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে শসা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। কেজিতে ৮ থেকে ১২ টাকা বেড়ে বেগুন এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে করলা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়ে পটোল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কেজিতে ১০ থেকে ১৩ টাকা বেড়ে মিষ্টি কুমড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়ে চিচিঙ্গা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। কেজিতে ৭ থেকে ১১ টাকা বেড়ে কচুর মুখী (বৈয়া কচু) এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ঢেঁড়স এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ফুলকপি এখন বিক্রি হচ্ছে ১শ ১০ টাকায়। কেজিতে ২৫ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে বারোমাসি সজিনা এখন বিক্রি হচ্ছে ১শ ৬০ টাকার দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সবজির দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ক্রেতারা এখন বিপাকে পড়েছে।
উপজেলার বৈইরাগী বাজারে তাজুল নামের এক সবজি ক্রেতা বলেন, দেশে খড়ার অজুহাতে শুধু কাঁচা মরিচ নয়, বিভিন্ন সবজির দামও বেড়েছে। দেশে কোন ছোট-খাটো দুর্যোগ বা সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হলেই সবজির দাম হুট করে বাড়ে দেই। এভাবে সব জিনিসের দাম দফায় দফায় বাড়লে বাজার করাই আমাদের কঠিন হয়ে পড়বে।
উপজেলার মোসলেগঞ্জ বাজারে মফিদুল হক নামের এক কাঁচা মরিচ ক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ কিনলাম ১শ ৬০ টাকা কেজি করে। এখন তা সেই কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকার কেজির দরে। প্রতিনিয়ত এভাবে সবজির দাম বাড়লে আমরা কি খাব।
উপজেলার মাত্রাইহাটে আল-আমিন নামে এক ক্রেতা বলেন, বাড়িতে হাফ-কেজি কাঁচা মরিচ লাগবে। কিন্তু বাজারে এসে দেখলাম কাঁচা মরিচে যেন আগুন লেগেছে। তাই হাফ-কেজির পরিবর্তে ২শ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা দিয়ে কিনলাম।
উপজেলার কালাইহাটের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা কাজল হোসেন বলেন, সবজির দাম তেমন না বাড়লেও। বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ২শ টাকা দরে বিক্রি করছি। আর ভারতীয় কাঁচা মরিচ বিক্রি করছি ১শ ৯০ থেকে ১শ ৯৫ টাকা কেজি দরে। আমরা পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনে নিয়ে আসছি, তা থেকে কেজি প্রতি দুই-তিন টাকা লাভ করে বিক্রি করছি।
সেখানে আরেক কাঁচা মরিচ বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, দেশের মধ্যে তীব্র তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরম হওয়ার কারণে এলাকায় কাঁচা মরিচের গাছ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশি কাঁচা মরিচের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। এ কারণে পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে আগের তুলনায় বেশি দামে কাঁচা মরিচ হচ্ছে।
উপজেলার মোলামগাড়ীহাটের কাঁচামাল বিক্রেতা মোবারক বলেন, এখন কাঁচা মরিচ বিক্রি করে তেমন লাভ নেই। শুধু কাস্টমার ধরে রাখতে কাঁচা মরিচ রেখেছি। কাঁচা মরিচ দোকানে রাখা দেখে তারা কাঁচা মরিচের সঙ্গে অন্যান্য সবজি কিনছেন, তাই বেশি দামে কাঁচা মরিচ দোকানে রেখে দিয়ে কিছুটা লাভ পুষিয়ে নিচ্ছি।
কালাই উপজেলার কৃষি অফিসার নীলিমা জাহান বলেন, এই এলাকার মাটি অনেক উর্বর হওয়ায় মরিচসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ ভালো হয়। চলতি মৌসুমে প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ওঠানামা করছে। কারণ তীব্র রোদ আর ভ্যাপসা গরমে এ অঞ্চলের অনেক মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণেই বাজারে কাঁচা মরিচ সরবরাহ কমে গেছে। তাই পাইকারিতে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। ফলে খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। এতে করে এলাকার কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছে। তবে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।