কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী একটি নৈশকোচে সংঘটিত হয়েছে ভয়াবহ ডাকাতি ও গণধর্ষণ। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি একটি রেস্তোরাঁয় নৈশভোজের জন্য যাত্রাবিরতি করে। এরপর পুনরায় যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে ১২-১৩ জন তরুণ কাঁধে ব্যাগ বহন করে বাসটিতে ওঠে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা তরুণরা ঘুমন্ত যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে একে একে বেঁধে ফেলে। প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে চালককে জিম্মি করে তারা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা, গহনা লুট করে নেয় তারা। এরপর তারা এক নারীযাত্রীকে ধর্ষণ করে। ডাকাত দলটি যাত্রীদের নির্যাতন চালিয়ে বাসটির পথ পরিবর্তন করে। সবশেষে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলায় রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির ডিবিতে বাসটি উলটে দিয়ে নেমে যায় তারা। চলন্ত বাসে নারী ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। তবে আলোচ্য ঘটনাটিতে নারী ধর্ষণের সঙ্গে ডাকাতিও যুক্ত হয়েছে। একটি ডাকাত দল এভাবে তিন ঘণ্টা ধরে বাসের যাত্রীদের জিম্মি করে ডাকাতি ও নারী ধর্ষণ শেষে নির্বিঘেœ পালিয়ে যাবে, ভাবা যায় না। স্মরণ করা যেতে পারে, গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোডে একটি বাসের সব যাত্রী নেমে গেলে দরজা বন্ধ করে বাসটির সুপারভাইজার ও হেলপার এক তরুণীকে ধর্ষণ করেছিল। এ সময় বাসচালকও উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে এই পাশবিক নির্যাতনে যোগ দিয়েছিল। গত বছরেরই ২৬ জুন চট্টগ্রামের মীরসরাই, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের মধুপুর, ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়াসহ চলন্ত বাসে গণধর্ষণের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বলা বাহুল্য, এসব ঘটনার ফলে বাসে নারীদের চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ আলোচ্য ঘটনাটি দেশবাসীকে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বৈকি। গণপরিবহণের যাত্রীরা নির্বিঘেœ তাদের গন্তব্যে পৌঁছবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গণপরিবহণের যাত্রায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো থাকছেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডাকাতি ও নারী ধর্ষণের ঘটনা। আলোচ্য ঘটনাটিতে যে ডাকাত দলটি জড়িত ছিল, তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা না গেলে আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যে উপায়েই হোক, ডাকাত দলটিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। এ বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় কথা, বাসে, বিশেষ করে নৈশবাসে নিরাপত্তা প্রহরী রাখার ব্যবস্থা করা গেলে ডাকাতি বা নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কমে যাবে। বাসের ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপার নিয়োগের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়েরও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি আমরা। সবশেষের কথা, চলন্ত বাসে ডাকাতি কিংবা নারী ধর্ষণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন তথা আইশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে রাতের বেলা সড়কগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।