রাজবাড়ীতে দুই বছরে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আট হাজার ৪২৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় কোটি টাকা। আর কারাদ- দেওয়া হয়েছে ৯২৫জনকে। জেলা প্রশাসনের কাছে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিভিন্ন কারণে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। উপজেলাগুলো হলো রাজবাড়ী সদর, পাংশা, বালিয়াকান্দি, কালুখালী ও গোয়ালন্দ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহকারী কমিশনার (ভ’মি) ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসব মামলা পরিচালনা করেন। করোনাকালে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাদ্য প্রস্তুত করা, পরিবেশ আইন অমান্য করা, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা, ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা প্রভৃতি বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। কোন মামলায় কারাদ- প্রদান করা। কোন মামলায় দেওয়া হয় আর্থিক দন্ড। আবার কোন কোনো মামলায় আর্থিক ও কারাদ- দুটিই প্রদান করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত দুই বছরে মোট আট হাজার ৪২৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দন্ড দেওয়া হয়েছে আট হাজার ব্যক্তিকে। আর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়েছে ৯২৫জনকে। শুধুমাত্র গতবছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছে ৭০১টি ভ্রাম্যমান আদালত। মামলা দায়ের করা হয়েছে দুই হাজার ৯৪৮টি। দন্ড দেওয়া হয়েছে তিন হাজার ৩১জনকে। অপরদিকে কারাদ- দেওয়া হয়েছে ৪৫৩জনকে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৭২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৮০ টাকা।
সরেজমিনে কথা হয় একাধিক ভূক্তভোগির সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, বিভিন্ন মেয়াদে তাদের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। কারাদ- দেওয়ার পর তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। মামলায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র তুলতে ঝামেলা পোহাতে হয় পরিবারের স্বজনদের। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপিল করার পর তারা খালাস পেয়েছেন। তাদের পূর্ব নির্ধারিত কারাদ- ভোগ করতে হয়নি।
রাজবাড়ী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবী অনুপ কুমার দাস বলেন, অনেক সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করার সময় যথাযথ নিয়মকানুন মানা হয়না। এসব ক্ষেত্রে ভূক্তভোগি আপিল করলে বিজ্ঞ আদালত শাস্তি কমাতে বা মামলা খারিজ করে দিতে পারেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ‘সংঘঠিত অপরাধীর ক্ষেত্রেই তাৎক্ষনিক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। যাতে করে ওই ব্যক্তি পুনরায় একই অপরাধ না করে এজন্যই মুলত শাস্তির আওতায় আনা হয়। জামিনযোগ্য অপরাধ হলে সে অবশ্যই জামিন পাবে কোর্ট যদি মনে করে, আপিল কোর্ট যদি মনে করে। এজন্যই আপিলের সুযোগ রয়েছে, যদি ভ্রাম্যমান আদালত কোন ভুল করে।’ অপরাধের তাৎক্ষনিক শাস্তি হওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের সুফল রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।