গত দুই দিন ধরে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়োহাওয়ার কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে মেঘনা নদীর জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ থেকে ফুট বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকা এবং চরাঞ্চলের এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ সময় জোয়ারের স্রােতে সহস্রাধিক কাঁচাঘরের ভিটিতে পানি উঠে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার অভ্যন্তরীন সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর বালুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ বালুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রামগতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ও শ্রেণি কক্ষে জোয়ারের পানি ডুকে পড়ে। এতে করে বিদ্যালয়ে শ্রেণি পরিচালনাসহ শিক্ষার্থীদের চলাচলের ব্যঘাত সৃষ্টি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ার কথা জানান, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শরীফ চৌধুরী।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেড়ে যায়। বেড়ীবাঁধ না থাকায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী বালুরচর, সুজনগ্রাম, জনতা বাজার, মুন্সীরহাট, সেবাগ্রাম, চরআলগী, বড়খেরী, চরগাজী, চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিতে প্লাবিত হয় মুন্সীরহাট বাংলাবাজার, জনতা বাজার ও চেয়ারম্যান বাজার। জোয়ারের স্রােতে সহস্রাধিক কাঁচা বসতঘরের ভিটিতে পানি উঠে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ পানিতে ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ। ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাঁচা ও পাকা সড়কের।
উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাকসুদ মিজান জানান, মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির স্রােতে তার ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ১, ২, ৩, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাসকারী সহশ্রাধিক পরিবার বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। ঘরে পানি প্রবেশ করায় রান্নার চুলা পানিতে ডুবে থাকায় লোকজন চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন।
চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নের কয়েকশ’ কাঁচা বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এলাকার অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
চরআব্দুল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নটি চারদিকে মেঘনা নদী বেষ্টিত হওয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে ওইসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। জোয়ারের পানিতে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান বাজার ও জনতা বাজার প্লাবিত হয়ে অর্ধশতাধিক দোকানঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির রামগতি উপজেলার টিম লিডার মো. মাইন উদ্দিন জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়োহাওয়ার কারণে মেঘনা নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ফুট ভেড়ে যায়। এতে অস্বাভাবিক জোয়ারে উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে বুধবার ভোর থেকে ভারতের দিকে অতিক্রম করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. শান্তুনু চৌধুরী বলেন গত দুইদিন মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি উঠে আবার নেমে যায়। ক্ষয়-ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি।