বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে এ বছর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে ,বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। ঘুস, আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকার নানা আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। সমাজের প্রায় সব স্তরেই দুর্নীতি আছে বলে ব্যাপক ভাবে অনুমান করা হয়, যা বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত ও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। মূলত মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে নিয়মিত তারা এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ হলো শ্রম আইনের শিথিল প্রয়োগ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও সীমিত অর্থায়নের সুযোগ। তবে কিছু ক্ষেত্রে এসব সীমাবদ্ধতার উন্নতি হচ্ছে। এরমধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে ব্যবসার পরিবেশ উন্নতিতে সরকারের প্রচেষ্টা দেখা গেলেও তা বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জও এ দেশে কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সুযোগ বিনষ্ট করছে। প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের হোলি আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, উগ্রবাদীদের এমন হামলা উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবে এক দশকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির সক্ষমতা প্রকাশ করছে। তারপরও বিনিয়োগ পরিস্থিতির পরিবেশে ঘাটতি রয়েছে। যেমন, বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও পরিবহন অবকাঠামোতে ঘাটতি আছে। এ ছাড়া জমিসংক্রান্ত বিরোধ যা শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নয় দেশের বিনিয়োগকারীদেরও হয়রানি করছে। ফলে তারা বিনিয়োগের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। আর রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ও আমলাদের দীর্ঘসূত্রিতায় হয়রানিতে বিনিয়োগের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ন’ টি খাতকে বিপুল সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি, কৃষি যন্ত্রপাতি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রকৌশল সেবা, বস্ত্র ও পোশাক, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ও সেবা, শিক্ষা ই-কমার্স স্বাস্থ্যসেবা ও ঔষধ। বাংলাদেশের নিম্ম মজুরি হার তৈরি পোশাক খাতকে সম্প্রসারণে সহায়তা করছে।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত।আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে স্থান করে নেবার পরিকল্পনায় এগুচ্ছে। তাই দেশে বিনিয়োগ না হলে কর্মস্থান হবে কি করে? তাই দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগের পথ সুগম করতে হবে। প্রতিবন্ধকতা গুলো দূর করতে হবে। দেশে যে প্রচলিত আইন রয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন করে দেশের সব স্তর থেকে দুর্নীতিকে নির্বাসনে পাঠাতে হবে। যদিও সরকার বলছে, দুর্নীতির ব্যাপার জিরো টলারেন্স। তা কথায় নয়, বাস্তবে দেখাতে হবে।