বিশে^র ১৭০টি দেশ দেউলিয়া হলে তবেই বাংলাদেশ দেউলিয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ্রিয়ার আলম, এমপি। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার অমরপুর ধন্দহ উচ্চবিদ্যালয়ের নবনির্মিত ৪তলা অ্যাকাডেমিক ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ১৭০টি দেশ দেউলিয়া হলে তবেই বাংলাদেশ দেউলিয়া হবে, যা অসম্ভব। এতগুলো দেশ একসঙ্গে দেউলিয়া হলে পৃথিবীই টিকে থাকবে না। বাংলাদেশকে যারা পেছনে টেনে নিতে চায়, তারাই এসব বলে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আসলে বাংলাদেশকে পেছন থেকে টেনে ধরাই সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্য।
শাহ্রিয়ার আলম বলেন, বর্তমানে দেশে রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ছিল সাড়ে ৬ বিলিয়ন। শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তাভাবনা ও নেতৃত্বের ফলে রিজার্ভ এই পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। আমাদের রেমিটেন্সও ভাল। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যে রেমিটেন্স এসেছে, এ বছর ওই সময়ে তা ২০ শতাংশ বেশি হবে। গত বছর আমাদের রপ্তানি আয় ছিল ৫২ বিলিয়ন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। এবার লক্ষ্যমাত্রা ৬০ বিলিয়ন ডলার। এবারও আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করব। তাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় নষ্ট করতে চায় না। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদেরকে উন্নত দেশে রূপান্তর হতে হবে। এজন্য আমাদের শিক্ষার উন্নয়ন করতে হবে, দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাবান্ধব, ছাত্র-ছাত্রীবান্ধব যে পরিকল্পনা তার-ই অংশ হিসেবে অমরপুর-ধন্দহ উচ্চবিদ্যালয়ের চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে সামনের দিনের কথা বলতে হবে। আজকের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে ভবিষ্যতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবী হবে। এজন্য শিক্ষকদের নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
বক্তব্যের শুরুতে প্রতিমন্ত্রী ৭৫’র ১৫ আগস্টে শহিদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ১৫ আগস্টে শহিদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে দুপুরে বাঘা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া রোগীর অনুদানের ও যুব ঋণের চেক বিতরণ বিষয়ক অপর এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ওই অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাঙালির নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে কাউকে না খেয়ে থাকতে দেব না, গৃহহীন থাকতে দেব না। তাঁর হাত ধরেই এখন বাঘা-চারঘাটে গৃহহীন-ভূমিহীন কেউ নেই।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো প্রত্যেক নাগরিকের খেয়াল রাখা, তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা করতে হলে জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষুধা থাকলে তা হবে না, এজন্য অনেককিছু করা হচ্ছে।
শাহ্রিয়ার আলম বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করি। দেশের সব মানুষ যেন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারে। এজন্য প্রান্তিক পর্যায়ের শেষ মানুষটি পর্যন্ত আমাদেরকে পৌঁছতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গত ১৩ বছরে দেশে এমন সব কাজ করেছেন, যার ফলে আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছে। আর যেখানে এখনও সম্ভব হয়নি, সেখানে স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতি রয়েছে। তবে এখন জনপ্রতিনিধিদের কাজে সরকারের নজরদারি বেড়েছে।
মাঠ প্রশাসনে দক্ষতা বৃৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মাঠ প্রশাসনে দক্ষতা এত বেশি বেড়েছে যে, এর ফলে করোনাসহ বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে; যেখানে পৃথিবীর অনেক বড় বড় দেশ করোনাকালে সংকট মোকাবিলায় হিমসিম খেয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ এটা মোকাবিলায় পঞ্চম অবস্থানে ছিল।
এসময় তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তরুণ-তরুণীদের শিক্ষা যেন উপযুক্ত ও সময়োপযোগী ক্ষেত্রগুলোতে কাজে লাগানো যায়। এতে দেশের কৃষিখাতসহ অন্যান্য খাতগুলোতে আরও বেশি উৎপাদন সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে ১৪ জন রোগীকে ৫০ হাজার টাকার ১৪টি ও ১৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার ৩৭টি যুব ঋণের চেক বিতরণ করা হয়।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আক্তারের সভাপতিত্বে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন উপজেলা সমাজ সেবা অফিস ও উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস।
বাঘা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. মো. লায়েব উদ্দীন লাভলু, উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের প্রধানগণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, ইউপি চেয়ারম্যানগণ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।