রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ পালনের নামে বিপুল পরিমান অর্থ তছরুপের ঘটনা এখন ধামাচাপার পথে। স্মরনযোগ্য যে,গত এপ্রিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ পালন করা হয়। নির্ভরযোগ্য একাধিক সুত্র দাবি করেছে, পুষ্টি সপ্তাহের নামে প্রথম দিনে ৩০ হতে ৩৫ জন বিভিন্ন পেশার লোকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হলরুমে ডেকে নিয়ে প্রত্যেকের হাতে ১০ টাকা দামের একটি ব্যাগে ১ কেজি বিরিয়ানীর চাল,১ কেজি চিনি,৫০০ গ্রাম মসুর ডাল ও ২ প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই দেয়া হয়। যার আনুমানিক মুল্য ৪’শ টাকা। পরদিন আবারও একই ভাবে ৩০ হতে ৩৫ জনকে ডেকে নিয়ে একই স্থানে ওইসব মালামালই দেয়া হয়। যাতে মোট ব্যয় করা হয় ২৫ হাজার টাকা। অথচ ৭ দিন ব্যাপী পুষ্টি ভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার নির্দেশনা ছিল। জানা গেছে,আপ্যায়ন বাবদ বরাদ্দ ছিল ১ম দিন ৫ হাজার টাকা,২য় দিন ৭ হাজার টাকা, ৩য় দিন ৮ হাজার টাকা,৬ষ্ঠ দিন ৪০ হাজার টাকা ও ৭ম দিনে ১৫ হাজারসহ মোট ৭৫ হাজার টাকা। শুধুমাত্র আপ্যায়ন খাতেই ৭৫ হাজার টাকার স্থলে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে অবশিষ্ট ৫০ হাজার টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ রয়েছে। ডেকোরেশনের জন্য ১ম দিনে ২ হাজার ,২য় দিনে ১ হাজার ও ৩য় দিনের জন্য ১ হাজার টাকাসহ মোট ৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর হল রুমে অনুষ্ঠান করায় এ খাতে কোন টাকা খরচ করা হয়নি। পুরো ৪ হাজার টাকাই তছরুপ হয়েছে। অতিথিবৃন্দের সম্মানীর জন্য ১ম দিনে ১৪ হাজার ও ২য় দিনে ৯ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। ১ম দিনে ৫ জন অতিথিকে ১ হাজার করে ৫ হাজার টাকা দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ তছরুপ হয়েছে। এ ছাড়া ব্যানার ১ হাজার এর স্থলে ৩’শ টাকা,বিলবোর্ড স্থাপনের জন্য ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তা স্থাপন না করে ১০ হাজার টাকার পুরোটাই হজম করা হয়েছে। ষ্টেশনারীর জন্য ১ হাজার ও প্রচার প্রচারনার জন্য দেড় হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৪’শ টাকায় একটি মাইকযোগে উপজেলা সদরে মাত্র একদিন প্রচারনা চালিয়ে ১১’শ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এভাবে শুধুমাত্র জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের বরাদ্দকৃত ১ লাখ ১৭ হাজার ৫’শ টাকা হতে দুই তৃতীয়াংশ টাকাই তছরুপ করা হয়েছে। উল্লেখ্য,ভুয়া বিল ভাউচার তৈরীতে পারদর্শী হিসেবে খ্যাত স্যনিটারী ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা পুরো অনুষ্ঠান পাড়ি দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে নয়-ছয় করে অনুষ্ঠান পাড়ি দিয়ে বিপুল পরিমান এই অর্থ তছরুপ করেন। উল্লেখ্য,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে কোন ধরনের চিঠি,প্রশিক্ষন অথবা সেমিনারের বরাদ্দপত্র এলেই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাদিকাতুল তাহিরিন ওই বরাদ্দপত্রের উপরে রহস্যজনক উদ্দেশ্যে স্যানিটারী ইন্সপেক্টরকে মার্ক করে দেন। ফলে অফিস স্ট্যাফ না হয়েও গোলাম মোস্তফা এসব দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। ফাইলপত্র যাচাই করলেই এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে একটি সুত্র দাবি করেছে। অথচ তিনি ফিল্ড স্ট্যাফ। তার কাজ গোটা উপজেলার হাট বাজারগুলোতে খাবারের মান যাচাই করা,মাছ মাংসের গুনগত মান ও পরিবেশ বিষয়ক দেখাশোনা করা। তিনি এসব দায়িত্ব পালন না করে সারাদিন হাসপাতালের একটি কক্ষে বসে কর্মকর্তার পেছনে পেছনে ঘুর ঘুর ও তাবেদারী করে বিভিন্ন খাতের ভুয়া বিলপত্র তৈরীপুর্বক মোটা অঙ্ক সাশ্রয় করে কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন। এজন্য কর্মকর্তা তার উপর যার পর নাই সন্তুষ্ট থাকেন। গত ১৪ বছর যাবত যেসব কর্মকর্তা এখানে এসেছেন তাদের সকলকে কৌশলে বাগিয়ে নিয়ে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা এসব অপকর্ম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কর্মকর্তার সাথে ভাগাভাগি করেছেন। এভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। সুত্র মতে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পদে চাকরী করেও তিনি গাজীপুরের মতো জায়গায় বহুতল ভবন করছেন। নামমাত্র পুষ্টি সপ্তাহ পালনের ব্যাপারে স্যানটিারী ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা বলেন-“বিভিন্ন মাদ্রাসায় ইফতারি দেয়া হয়েছে ”। মোট কথা এ উপজেলায় যেভাবে ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ তছরুপের মাধ্যমে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ পালন করা হয়েছে এতে করে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের মুল উদ্দেশ্যই ভেস্তে গেছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও গত ৪ মাসেও তদন্তের উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে !