সাতক্ষীরায় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার করায় স্কুলের সভাপতির বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। গত তিনদিন ধরে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বহিস্কারেরর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মিছিল, মানববন্ধন, কুশপুত্তলিকা দাহসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, যতদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নিঃশর্তভাবে স্কুলে বহাল করা না হবে ততদিন এমনিভাবে কর্মসূচি চলবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ধুলিহর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলছে এমননি লাগাতর কর্মসূচি। এতে করে স্কুলের শিক্ষকরাও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। ফলে স্কুলের লেখাপড়ার পরিবেশ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান অভিভাবকরা।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস ছালামকে সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে স্কুলের ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২২ আগস্ট) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীর স্কুল ক্যাম্পাস ঘিরে রাখে। এ সময় তারা তাদের প্রিয় শিক্ষককে বিনাশর্তে স্কুলে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে। পরে তারা স্কুলের সভাপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করে। এর আগে রোববার (২১ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল করার দাবী জানান এবং দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই সাথে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এসএম মাহবুবর রহমানকে কমিটি থেকে বহিস্কার করার দাবী জানান।
এরআগে গত ১৬ আগস্ট ধুলিহর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুস সালামকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এসএম মাহাবুবুর রহমান। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের অভিভাবক সদস্য মোঃ জাহারুল ইসলাম, মোঃ আজারুল ইসলাম, শেখ আবদুল হামিদ ও মোঃ আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো অনিয়ম-দুর্নীতি করে চলেছেন।
এমনকি স্কুলের বিভিন্ন তহবিল থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে থাকেন। সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিজের বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান। এ ছাড়া বিগত চার বছর যাবৎ বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব কারও কাছে উপস্থাপন না করে সম্পূর্ণ গোপনীয়ভাবে নিজেই পরিচালনা করেন। তাদের আরো অভিযোগ, ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি বই স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতদের কাছে বিক্রি করা এবং চতুর্থ শ্রেণির দুইজন কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। এ ব্যাপারে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রধান শিক্ষক কমিটিকে সহায়তা না করায় তাকে এই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তবে, বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি বিদ্যালয়ের সভাপতি এসএম মাহাবুবর রহমান তার লোকজন দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সাজিয়েছেন। এমনকি তিনি প্রধান শিক্ষকের গায়ে হাত তুলে তাকে লাঞ্ছিত করেছেন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা স্কুলের প্রধান শিক্ষকে স্বপদে বহাল ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এসএম মাহবুবুর রহমানকে বহিষ্কারের দাবী জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি এসএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, কোন শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট/কোচিং করাতে পারবে না মর্মে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। অথচ প্রধান শিক্ষক আবদুস ছালাম তার নিজের বাড়িতে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থীকে ব্যাচ তৈরি করে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। স্কুলে আয় ব্যয়ের কোন হিসাব তিনি দেন না। শিক্ষা পন্য বানিয়ে এ শিক্ষক বাণিজ্য করছে। তাই বিদালয়ের অভিভাবক সদস্যদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। যারা বিক্ষোভ করছে তারা ওই শিক্ষকের কোচিংয়ের শিক্ষার্থী। তাদেরকে উস্কানী দিয়ে এমন কাজে নামানো হয়েছে।