বর্তমান সময়ে দেশে সঙ্কটে ভুগছে চা-শ্রমিকরা। দেশে বর্তমান চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭ টি। যার মধ্যে সর্বোচ্চ মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত ৯২টি চা বাগান। আর এই চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত দেড় লক্ষাধিক শ্রমিক। তাদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা। অর্থাৎ মাসিক ৩৬০০ টাকা বেতন। এই সীমিত আয় দিয়ে বর্তমান বাজারে দ্রব্যসামগ্রীর যে দাম সেই তুলনায় এই টাকা কিছুই না। ফলে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ করতে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
"দেশের চা শিল্পের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে চা শ্রমিকদের মজুরি ১৬৮ টাকাও হলো না। এখনও আমাদের মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। ২ কেজি চালের সমান। যা সহজেই বুঝা যাশ চা শ্রমিকদের দুঃসহ দিনযাপনের ইতিবৃত্ত। চা শ্রমিকরা এখনও দৈনিক সর্বোচ্চ বেতন ১২০ টাকা হলেও চা মনির সারি শ্রমিক প্রতি মাথাপিছু দৈনিক বায় তাদের ৪০০ টাকা।
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৬৭টি চা বাগানে ৫ লক্ষাধিক চা শ্রমিকের মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক প্রায় ১ নাম। সেই একজন শ্রমিকের মজুরির ওপর কমপক্ষে ৫ জনের ভরণ পোষণ নির্ভর করে।
করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চা শ্রমিকরা উৎপাদনে সক্রিয় থাকায় ২০২১ সালে দেশে ৯৬ দশমিক ৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। চা শ্রমিক ইউনিয়ন যেখানে দাবি করেছে মাত্র ৩০০ টাকা। আর প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চা শ্রমিকরা দৈনিক ২৩২ রুপি (২৭৭ টাকা) পেয়োও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালসহ শীর্ষ চা উৎপাদনকারী দেশ তান ও কেনিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। এ তো শুধু মজুরির কথা। শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৈষম্যহীনভাবে দেওয়ার ক্ষেত্রেও এগিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো।
সরকারি তথ্য মতে, দেশে মাথাপিছু আয় ২,৮২৪ ডলার অর্থাৎ ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৮০ টাকা, সেখানে চা শ্রমিকদের সর্বোচ্চ আয় মাসিক ৩,৬০০ টাকা হিসাবে বার্ষিক মাত্র ৪৩,২০০ টাকা। বর্তমানে চা শ্রমিকরা দৈনিক ৫ জনের ভরণপোষণ নির্ভর করে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও তো সেটা সম্ভব না। এমপি উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুশ শহীদ জাতীয় সংসদে চা শ্রমিকদের জন্য ৫০০ টাকা মজুরির পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন। চা বাগান সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ নবম স্থানে উঠে।
সর্বোচ্চ মজুরি পান ২২০ টাকা। সব শ্রমিকের পাড় এটা অর্জন করা সম্ভব না। শ্রমিকদের মধুর বৃষ্টি চুক্তি হওয়ার কথা এ দুই বছর। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ০ সালের ১৫ অক্টোবর ব মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১২০ টাকা উন্নীত করা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালে ১ জানুয়ারি হতে চ বৃদ্ধি করার কথা। বর্তমানে চুক্তির মেয়াদ ১৯৪ মা অতিক্রান্ত হয়েছে। ফলে মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি স্বাক্ষরে চা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বার বার দাবি জানানো হলেও মালিক পক্ষ কোনো আলোচনা হসনি। অবশেষে তা শ্রমিক ইউনিয়ন দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে ২ ঘণ্টা করে ৪ দিনের কর্মবিরতি শুরু করেছে।
গত ১৩ আগস্ট থেকে দেশের ১৬৭টি চা শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘট শুরু করে।বাগানে বাগানে মিছিল, সমাবেশ, পথসভা ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয় তারা। সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক নাসেন মামুন চৌধুরী। প্রথমে তিনি চা শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসেন। তবে চা বাগান মালিক পক্ষ চা শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয় বলে দাবি করেছে। তাদের মতে, শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধি করা হলে চা বাগানগুলোকে দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে বলে দাবি করেন বাংলাদেশি তা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ তিন পাতা দুইপক্ষেরই ক্ষতি। এ মৌসুমে একজন শ্রমিক ৫০ কেজি থেকে ১০০ কেজি পাতা তুলতে পারে। সপ্তাহে দুই-তিন হাজার টাকা বেশি রুজি করাতে পারে। একজন চা শ্রমিকের পেছনে মজুরি, রেশন, বাসা, মেডিকেল রানাসহ মালিকের মাসে ১৫ থেকে ১৬ হাজার
টাকা খরচ হয় বলে জানানো হয়। প্রকৃত অর্থে চা শ্রমিকরা কী পান?
বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে পাঁচ সাত সদস্যের চা শ্রমিক পরিবার কোনোমতেই চলতে পারছেন না বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। শমশেরনগর চা বাগানের নারী শ্রমিক মনি গোয়ালা ও দেওছড়া চা বাগানের মায়া রবি দাসের সাথে কথা বললে এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা চা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মজুরি হিসাবে মাসে ৩,১০০ টাকা পাই।। আর সপ্তাহে সাড়ে ৩ কেজি হারে দম দিলেও ওজনে ৩ কেডিই হয়। মাসে ১২ কেজি। তবে ১২ বছরের নিচে সন্তান থাকলে পদের পরিমাণ কিছুটা বেশি পাওয়া যায়। চিকিৎসা হিসাবে বাগানের পক্ষ থেকে যেটুকু পাওয়া যায় তা অতি নিতান্ত।
চা বাগানেই বেড়ে ওঠা সন্তোষ রবি দাস অঞ্চনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। এখন প্রতি নিচ্ছেন বিসিএস পরীক্ষার। তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের জন্য যত ভর্তুকির কথা বলা হয় তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয় না। বরং দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা বলতে পারি নাপা। আর এরপর টি স্টেটের হাসপাতালে প্রাথ মিক কাটা-ছেঁড়ার চিকিৎসা হয়। সেখানেও ১-২ জন চিকিৎসক থাকে নাদের অনেকে আবার এমবিবিএস নয়, ডেন্টাল থেকে পান করা। এরপর জরুরি কিছু হলে ওসমানী হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে না হলে ঢাকায়। কিন্তু এইসব খরচ তো চা শ্রমিককেই দিতে হয়। অবশ্য এসব ভর্তুকির বিষয়া পাশ কাটিয়ে যে বিদ্যাটি তার কথায় প্রাধান্য পায় তা হলো: অর্থনৈতিক অধিকার। তাই শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
চা শ্রমিক মালতি জানান, বংশপরম্পরায় তিনি চা পাতা তুলতে শিখেছেন। অফ পিক দিয়ানে তিনি পাতা কিছু কম তুললেও পিক সিজনে তিনি ৩০-৪০ কেজি কাঁচা চা পাতা তোলার সামর্থ্য রাখতেন। তবে এখন আর আগের মতো পারেন না। বেশি চা পাতা না তুললে উপায় নেই, কারণ আমার একমাত্র দৈনিক ন মজুরি ১২০ টাকায় আমার ছয়জনের পরিবার চলে। স্বামী মতিদান কোথায়ও কাজ েেশ করেন নয়তো বেকার থাকেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানতির পরিবারের জীবন চলছে না। সকাল-বিকাল পরিশ্রম করে ২০ কেজি চা পাতা তুললে ১২০ টাকা মজুরি মেলে। অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে কাজে না গেলে সামানা সেই অর্থও পান না।
এসব জীবন আরও বেদনার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন মানতি। তার কথায় উঠে আসে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চা বাগানের শ্রমিকদের মানবেতর জীবন-সংগ্রামের আদেখা। বাচতেও পারি না মরতেও পারি না, তাই আন্দোলনে আমরা। আন্দোলনে কেন গেলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আন্দোলনে গিয়েছি জীবন-সংগ্রামের জন্য না। বাঁচার জন্য। না খেয়ো যেন না করি এজন্য আন্দোলনে গেছি। আন্দোলন থেকে এসে মাতৃভাত খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। উপোস থেকে আন্দোলন করেছিলাম।
আমাদের শ্রমিকেরা কী কঠিন অবস্থায় আছে, সেটি সরকার ও মালিকপক্ষকে অবশ্যই দেখতে হবে। চা বাগানের শ্রমিকদের খাদ্যের অভাব, ভালো চিকিৎসার অভাব, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অভাব। ঘরে ঘরে শ্রমিকদের কষ্ট। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর একটি ভালো সমাধান হয় সেদিকে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে শ্রমজীবী চা শ্রমিকরা। একমাত্র আপনি পারেন চা শ্রমিকরা বর্তমানে যে সংকটে ভুগছে তার সুষ্ঠু সমাধান দিতে। ২০২২ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশে এসে আমরা চা শ্রমিকদের মানবেতর জীবন কাটুক তা দেখতে চাই না। চা শ্রমিকরা কতটুকু বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সুযোগ-সুবিধার কথা যদি বলা হয়, তবে বলা যেতে পারে শ্রমিকদের মিলে নামমাত্র চিকিৎসা আর রেশন। রেশনে মিলে বাজারের সবচেয়ে কমদামি চাল বা আটা। শিক্ষা বলতে দায়সারাগোছের প্রাইমারি স্থুল। বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরুলেই ঝরে পড়ে। যদিও কিছুসংখ্যক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যায়, তবে এর সংখ্যা খুবই কম। এর মূল কারণ দারিদ্রা। দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে যেখানে পরিবারের অন্ন জোটানো কষ্টকর, সেখানে শিক্ষার ব্যাপার নিছক হাস্যকর।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে সবিনয়ে জানাতে চাই- শুধু চা শ্রমিকই নয় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যক্তিরাও বর্তমান সময়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করছে।
এদেশের সাধারণ মানুষেরা একটু সুখ-শান্তি নিয়ে বাচতে চায়। একটু স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়, তাদের সব কাজে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পেতে চায়। আর এসব কিছু বাস্তবায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নজর দিতেই হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে সরকারকে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমদানিনির্ভর সব নিত্যপণ্যের মজুদ মনিটরিংয়ের আওতায় এনে সরকারিভাবে মজুদ বাড়াতে হবে। নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসৎ ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটেরদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেন তাদের শাস্তি দেখে বাদবাকি সবাই এমন ঘৃণ্য কাজ করতে সাহস না পায়। পা সঙ্কটের অজুহাতে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা যেন পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের দেশে কৃষিজ উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। নয়তো এভাবেই চলতে থাকলে জনগণের জীবনযাপন করতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হবে। তাই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে এবং অন্যন্য সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকেই। কারণ আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কন্যা, মানবতার মা আপনি।
দেশের চা শ্রমিকদের দিয়ে হাড়ভাঙা খাটুনিতে প্রতিবছর চা শিল্পে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে। ২০২১ সালে উৎপাদন হয়েছে ৯৬ মিলিয়ন কেজি চা, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড। চা শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে যারা। কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে আন্দোলন চলছে, ধর্মঘট হচ্ছে যা বর্তমান সময়ে কখনোই কাম্য নয়। চা শ্রমিকদের দাবিকৃত ন্যায্য মজুরি ব্যাপারে অসন্তোষ দীর্ঘ স্থায়ী হয় তবে চা শিল্পের উন্নয়নে বাধা-বিপত্তির আশঙ্কা দেখা দেবে। কাজেই এখনই সময় চা শিল্পের উন্নয়নে, শ্রমিকদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ভাবা আর তাদের দাবি বাস্তবায়ন করা।
আমাদের দেশে চা শ্রমিকদের বঞ্চনার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। স্বাধীনতার পর নারী শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ছিল এক টাকা এক আনা আর পুরুষ শ্রমিকের ছিল এক টাকা দুই আনা। পরে বিভিন্ন সময়ে বেড়ে হয় ৮ টাকা, ১২ টাকা, ১৮ টাকা, ২০ টাকা, ২২ টাকা এবং ২৪ টাকা। ২০০৮ সালে এসে হয় ৩২ টাকা। ২০০৯-এ এসে হয় ৪৮ টাকা। আর ২০১৭ সালে হয় ১০২ টাকা এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ১২০ টাকা। চা শ্রমিকরা জানান, তাদের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য খুবই কম থাকে। তাদের প্রতিদিনকার খাদ্যে রয়েছে সকালবেলা রুটি আর চা বা আলু ভাজি; দুপুরে রুটির সঙ্গে আলু সিদ্ধ, পেঁয়াজ ও কচি চা পাতার মিশ্রণে ভর্তা এবং ঠান্ডা চা। রাতে ভাত। ভাতের সঙ্গে চানার ডাল বা অন্য কিছু।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, তাদর দাবি ২০টি। মূল দাবি হলো মজুরি দিনে ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করতে হবে। এটা পূরণ হলেই তারা কাজে ফিরে যাবে। কিন্তু মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় তারা তাদের মজুরি মাত্র ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ টাকা করতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু তাদের ৩০০ টাকার দাবি পূরণ না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাব। শ্রমিকরা আর চলতে পারছে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছর পরপর মজুরি বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তির আইন ভঙ্গ করছেন। ২০ মাস আগে মজুরি বাড়লে শ্রমিক পরিবারগুলো কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার পরিচালনা করতে পারত। সবাইকে মনে রাখতে হবে- চা শ্রমিকরা শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই নয়- ইতিহাস, পরিচয় ও পেশার কারণে তারা চরম অবহেলার শিকার। এদের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিয়োগদাতাসহ সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের প্রাপ্য মর্যাদা, মজুরি ও শ্রম আইন এবং বিধিমালা অনুসারে ক।ে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা তা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি রাখে।
(লেখক : সাংবাদিক, কবি প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী ও বঙ্গবন্ধু গবেষক)