খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত এ স্বপ্নের ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণকাজ। ১৫ মাসে কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিলনা বললেই চলে। কাজের অগ্রগতি বলতে সেতুর পূর্ব পারে দিঘলিয়ার দেয়াড়া আরডিএন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারি খাস জমির উপর ২৪ এবং ২৫ নং পিলারের কাজ চলমান এবং সেতুর পশ্চিম পারে নদীর তীর সংলগ্ন সরকারি খাস জমির উপর ১৩ এবং ১৪ নং পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। যা সেতুর মোট কাজের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ার কারণ হিসেবে শুরু থেকে সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতাকে দায়ী করে আসছে। এদিকে ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজ শুরু থেকে বিভিন্ন মিডিয়ায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল যে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ ৩ টি কারণে বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। (১) ভৈরব সেতুর পূর্ব পাশে মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ। (২) সেতুর পশ্চম পাশে মহসিন মোড় থেকে রেলীগেট পর্যন্ত রেলের জমির মালিকানা হস্তান্তর। (৩) ভৈরব সেতুর শহরাংশে ৩০ টি বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ। বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের জন্য সওজের পক্ষ থেকে ওজপাডিকোকে টাকা দিলেও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এখনও পর্যন্ত খুঁটি অপসারণের কাজ করে নি। অপর দিকে শহরাংশের রেলওয়ের জায়গার মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় নি। শুধু ভৈরব সেতুর পশ্চিম অংশের মালিকানাধীন জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে মাত্র।
ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার ৯ মাস পর চলতি বছরের ৬ মার্চ খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে সেতুর দিঘলিয়া অংশের নগরঘরঘাট ফেরিঘাট থেকে উপজেলা সদর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৪শ’ জমির মালিকদের ধারা ৪শ’ জমির মালিকদের ধারা ৪ এর( ১) উপধারা মোতাবেক আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ প্রদান করা হয়।
এ দিকে ৪ ধারা নোটিশ দেওয়ার প্রায় ৬ মাস পর সকল জল্পনা কল্পনা ও হতাশার অবসান ঘটিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে গত মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ (সাধারণ) শাখা থেকে সেতুর দিঘলিয়া অংশে ভূমির মালিকদের ৮ ধারার (৩) (ক) উপ-ধারা মোতাবেক ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশ জারির নং ৪২৮৮(৭)। কেস নং ৫/২০২১-২২। জেলা প্রশাসকের পক্ষে নোটিশে স্বাক্ষর করেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন।
দিঘলিয়া উপজেলা চৌরাস্তা মোড়ে ৮ ধারা নোটিশ প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আলী রেজা বাচা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রসেস সার্ভেয়ার মোঃ সরোয়ার হোসেন, মোঃ এসকেন্দার। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের ছিলেন শেখ আনছার আলী, মোল্যা শাসছুর রহমান, আশরাফুজ্জামান মিঠু বিশ্বাস প্রমুখ।
৮ ধারা নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে সেতুর দিঘলিয়া অংশে জমি অধিগ্রহণে আর কোন বাঁধা নেই বলে জেলা প্রশাসক অফিস সূত্রে জানা জানা যায়।
এদিকে গত বুধবার (৩১ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনা জেলা প্রশাসকের পক্ষে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মামুন সেতুর তদারকি সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৩ নং দেবনগর মৌজার মালিকানাধীন ৯ দশমিক ২৮৯২ একর ভূমি এবং ১৪ নং দিঘলিয়া মৌজার মালিকানাধীন ১ দশমিক ০৮৬৮ একর সর্বমোট ১০ দশমিক ৩৭৪ একর ভূমির কাগজপত্র হস্তান্তর করেন।
বেলা ১১ টায় দিঘলিয়ার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) এর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ ভূমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে টেলিফোনে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দিঘলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আলী রেজা বাচা, ভৈরব সেতুর কনসালটেন্ট ফার্মের টীম লিডার প্রকৌশলী রইস উদ্দিন, কনসালটেন্ট প্রকৌশলী কমলেন্দু মজুমদার, টিমের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আঃ আজিজ, খুলনা সওজ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান, ভৈরব সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী এস এম নাজমুল, প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাহবুবুর রহমান, মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রসেস সার্ভেয়ার মোঃ মোতালেব হোসেন, খুলনা সওজ এর সার্ভেয়ার মোঃ নাইমুল ইসলাম প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতার ফলে আজ আমরা সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের ভূমি অধিগ্রহণের কাগজপত্র বুঝে পেলাম। এখন থেকে সেতুর কাজের গতি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। আশা করি বর্ধিত সময় আগামী দেড় বছরের মধ্যে খুলনাবাসীর প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেতুর পশ্চিম পার রেলিগেট থেকে মহাসিন মোড় পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ অংশের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।