দিঘলিয়া পুলিশের মাদক বিরোধী অব্যাহত অভিযানে বিভিন্ন মাদক সেবন দ্রব্যাদি গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা নেশা জব্দের পাশাপাশি আসামীদের গ্রেফতার করা হলেও পর্দার আড়ালে থাকা গডফাদাররা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিঘলিয়া থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছোট খাটো মাদক বিক্রেতা বা মাদক সেবনকারীদের গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই আইনের ফাঁক ফোঁকরে আদালত থেকে মুক্ত হয়ে এসে ফের পূর্বের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদের দ্বারা সক্রিয় হয়ে লিপ্ত হয় পূর্বের ন্যায় মাদক বেচাকেনায়।
বিজ্ঞমহল আরো জানান, আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে প্রকৃত মাদক যোগানদাতারা অভিনবপন্থা এবং সুকৌশলে দিঘলিয়ার অধিকাংশ এলাকায় মাদকের অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে। অতি সম্প্রতি সময়ে দিঘলিয়ার ফরমাইশখানা নদী কূল দিয়ে, বার্ম্মাশীল খেয়াঘাট এলাকা, ফরমাইশখানা পূর্বপাড়া, ফরমাইশখানা গোলারঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা, দেয়াড়া জ্ঞানীর মোড় এলাকা, দেয়াড়া কলোনি এলাকা, দেয়াড়া খেয়াঘাট, দেয়াড়া কোহিনুর স্কুল এলাকা, দেয়াড়া পূর্বপাড়া কবরস্থানের পূর্ব ও পশ্চিমের বাগান এলাকা, দিঘলিয়া ইউনিয়নের দেয়াড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা, সেনহাটি স্কুলের পিছনপাড়া এলাকা, সেনহাটি লিচুতলা এলাকা, সেনহাটি কেসিআই ইনস্টিটিউট এলাকা, সেনহাটি শিব মন্দির এলাকা, সুগন্ধী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকা, সারোয়ার খান কলেজ এলাকা, উত্তর চন্দনীমহল (ভোগদিয়া) এলাকা, দক্ষিণ চন্দনীমহল এলাকা, দিঘলিয়ার বিভিন্ন পাড়া, নন্দন
নন্দনপ্রতাপ, আড়ুয়া, কামারগাতী, হাজীগ্রাম, বাতীভিটা, পানিগাতী, ব্রহ্মগাতী, মমিনপুর, লাখোহাটিসহ গাজীরহাটের প্রত্যন্তাঞ্চলে ইয়াবা ও গাঁজার প্রভাব বিস্তার লক্ষণীয়।
এলাকার বিশিষ্টজনদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এলাকায় কখনও দুপুরে, কখনও সন্ধ্যায় আবার কখনও গভীর রাতে ২/১ জন অচেনা মোটরসাইকেল আরোহীকে আসা-যাওয়া ও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরা হঠাৎ করে এলাকায় আসে আর হুটহাট করে চলে যায়।
তাদের ভাষ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক বিক্রেতারা সুকৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে স্বল্প পুঁজিতে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার রমরমা ব্যবসা। অনেক সময় তাদের মাদক হাত বদলের জন্য কাজে লাগাতে হচ্ছে উঠতি বয়সী যুবক ও মহিলাদেরও। যাদের দেখে প্রশাসনের মনে হবে না যে এরা মাদক ব্যবসায়ী বা মাদক বহনকারী। অনেক সময় এরা যখন মাদক বহন করে তখন প্রশাসনের লোক রাস্তায় থাকে না। মাদক আসক্তির কারণে ক্রমশই সমাজে বেড়ে চলেছে সামাজিক অপরাধ। যার মধ্যে রয়েছে চুরি, ছিনতাই, খুন-জখম, ধর্ষণসহ বহুল সামাজিক অপরাধ।
সমাজের বিজ্ঞমহলের অভিমত মাদকের নেশার কারণে সমাজে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে অনেক পরিবার। মা-বাবার সাথে সম্পর্কহানী ঘটছে সন্তানের। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও থামছে না মাদকের ব্যবসা। মাদক মামলায় আটককৃত ব্যক্তিরা কয়েকদিন ঘুরতে না ঘুরতেই জামিন পেয়ে যায় বিজ্ঞ আদালত থেকে। যার দরুন ওই সমস্ত মাদক বিক্রেতারা পুনরায় যুক্ত হয় মাদক কারবারীতে।
দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নানা রকম মাদকের ছড়াছড়ির ব্যাপারে কথা হয় দিঘলিয়া উপজেলার বিশিষ্ট তরুন সমাজ সেবক ও সুগন্ধি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোল্লা মাকসুদুল ইসলামের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এবং সর্বজনীন স্বীকৃত সুশীল সমাজ প্রতিষ্টায় এবং নতুন প্রজন্মকে সুন্দর, বিজ্ঞান মনস্কামনায় গড়ে তুলতে এবং সৃজনশীল নতুন নতুন স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে সমাজকে মাদকের আক্রোশমুক্ত করতে হবে।
দিঘলিয়ায় মাদকের বিস্তার ও কেনাবেচার ব্যাপারে কথা হয় দিঘলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম এর সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামীদিনের সোনালী সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার নতুন প্রজন্মের যুব সমাজকে রক্ষা করতে এবং সুন্দর, নিরাপদ এবং শান্তির দিঘলিয়া জনপদ বিনির্মাণে সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। আমরা আমাদের নিজ নিজ সন্তানকে ভালো রাখি। সমাজকে নেশা মুক্ত করার কাজে এগিয়ে আসি। আজকের যুব সমাজ আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তাই ভবিষ্যৎকে ভালো করতে মাদকমুক্ত দিঘলিয়া বিনির্মাণে সকল প্রকার মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে আইন প্রয়োগকারী সকল মহলের ও সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গের।