নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষকদের অদক্ষতার কারণে শিক্ষার্থী শুন্য হয়ে পড়েছে পীরগাছা উপজেলার বামন সরদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা বেগমের অনিয়ম-দুণীতি ও আত্মীয়করণের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থীকে পড়িয়ে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা বেতন তুলছেন ৪ জন শিক্ষক। দীর্ঘদিন থেকে এমন অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলে আসলে জেনেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি উপজেলা শিক্ষা অফিস। উল্টো শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাসিক চুক্তিতে টাকা দেন বলে প্রকাশ্যে বলেন ওই প্রধান শিক্ষক।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগে জানা যায়, ২০১২ সালে উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নের বামন সরদার রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৬ সালে জাতীয় করণ করা হয়। তখন থেকেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন আনোয়ারা বেগম। আর সহকারি শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন সেলিনা আক্তার, ফাতেমা বেগম ও রুবিনা বেগম নামে তিন শিক্ষক। বিদ্যালয়টিতে কাগজে-কলমে ১১০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও পাওয়া গেছে মাত্র ১২ জন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৬ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ২ জন। প্রতিদিনেই ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকেন বলেন জানান স্থানীয় গ্রামবাসী। প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা বেগম ওই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানীর যোগসাজসে অনিয়ম আর দুনীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনত করেছেন বিদ্যালয়টি। আর গোলাম রব্বানী ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক রুবিনা বেগমের পিতা হন। প্রধান শিক্ষক ও গোলাম রব্বানী মিলে বিদ্যালয় উন্নয়ন ও সংস্কারের টাকা, স্লীপের টাকা কাগজে-কলমে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তাদের আত্মীয়করণ ও অভিভাবকদের সাথে অসাদ আচরণের কারণে বর্তমানে শুন্যের কোটা শিক্ষার্থী সংখ্যা। স্থানীয় গ্রামবাসী কেয়া আক্তার, জামিরণ নেছা, আকলিমা বেগম দেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। কাগজে-কলমে দুই মাসের শিশুও নাকি ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র। রয়েছে অন্য স্কুলে পাঠদানরত ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর নাম। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক অর্থে বিনিময়ে সহকারি শিক্ষিকা ফাতেমা বেগমের ভাইয়ের স্ত্রীকে সভাপতি নির্বাচন করতে আশ্রয় নেন অনিয়মের। তরিঘরি করে হামিম ও তামিম নামে ৩ ও ৪ বছরের দুই শিশুকে ভর্তি দেখিয়ে তাদের মা আখিঁ আক্তারকে গোপনে সভাপতি নির্বাচন করে রাখেন প্রধান শিক্ষক।
সোমবার সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ১২ শিক্ষার্থী উপস্থিত। ৫ম শ্রেণির ক্লাসে একটি মাত্র বেঞ্চে বসে আছেন দুজন শিক্ষার্থী। পাশে বাচ্চা নিয়ে খেলছেন শিক্ষিকা। আর ৪র্থ শ্রেণিতে ৬ এবং ২য় শ্রেণিতে ৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে ২/৩ সেট ছাড়া বেঞ্চ নেই। এ সময় প্রধান শিক্ষিকা আনোয়ারা বেগম উপস্থিত গ্রামবাসীর সামনে বলেন, আমরা শিক্ষা অফিসার এবং সহকারি শিক্ষা অফিসারকে প্রতি মাসে টাকা দেই। তারা সব জানে। কারো করার কিছু নেই। এ ছাড়া কোন তথ্য দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ক্লাষ্টারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ইকবাল বলেন, আমরাও ১৫-২০ জনের বেশি শিক্ষার্থী পাইনি। অনিয়ম আছে। ৪ শিক্ষক কিভাবে ১২ শিক্ষার্থীকে পড়িয়ে লাখ টাকা বেতন তোলেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন দেখছি কি ব্যবস্থা নেয়া যায়।
পীরগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।