নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রতি বছর বাড়ছে কলার আবাদ। উৎপাদন খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় কলার আবাদে ঝুকে পড়ছে চাষিরা। চাষাবাদ বাড়তে থাকায় এ অঞ্চলের হাটগুলোতে পাওয়া যায় প্রচুর কলা। বর্তমানে কলা বেচা কেনার পাইকারী হাটে পরিনত হয়েছে সৈয়দপুর কলা হাটি নামে একটি বাজার। এখানে বেশ কয়েকটি কলার আড়ত গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন এ আড়তে প্রায় কোটি টাকার কলা বেচা কেনা হয়ে থাকে।
সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে কলার চাষ। বিশেষ করে উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে কলার আবাদ বেশী। প্রতি বছর এ ইউনিয়নে বাড়ছে কলা চাষীর সংখ্যা।
খোদ্দ বোতলাগাড়ীর কলা চাষী মোহেবুল্লাহ সরকার বাদল জানান,তিনি ৮ বছর থেকে কলার আবাদ করে আসছেন। এ বছর তিনি ১ একর জমিতে কলা চাষ করেছেন। ১ একর জমিতে তার কলা হবে ২ হাজার পির। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কলার আবাদ ভাল হবে বলে জানানেল তিনি। তবে রোগবালাই এলে জমিতে কিছু কলা গাছ পঁচে নষ্ট হয়ে মরে যায়। তিনি বলেন কয়েক বছরের তুলনায় এবার তার কলার ফলন ভাল হয়েছে। তার জমিতে ১ পিরে কলা ধরে প্রায় ১০০টা। জমিতে ফসল থাকা অবস্থায় পাইকাররা এসে কলা কিনে নেয়। কলা বিক্রির জন্য তাকে কোন হাটে যেতে হয় না বলে জানান। পির হিসাবে তিনি জমিতেই কলা বিক্রি করেন। তিনি বলেন ১০০ পির কলার দাম ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। সে হিসাবে এবার তিনি আশা করছেন ১ একর জমির কলা বিক্রি করে পাবেন ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। কলা চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।
কখন কলার চাষ করা হয় এ বিষয়ে তিনি বলেন রোপনের ১০ মাসের মধ্যে কলা পরিপক্ক হয়। অর্থাৎ বিক্রি করা যায়। সাধারণত আশ্বিন- কার্তিক মাসে কলা রোপন করা হয়। তবে কলা রোপনের উত্তম সময় হল বৈশাখ মাস।
কোথা থেকে কলার চারা আসে এ ব্যাপারে জানান,একবার যারা কলার চাষ করেছে তাদের চারা কিনতে হয় না। কারণ কলার চারা এমনিতেই জমিতে হয়ে থাকে। সেগুলো আমরা যতœ করে পুণাঙ্গ চারায় পরিনত করি।
একই ইউনিয়নের কলা চাষী গাজী সালাহ উদ্দিন মাস্টার,আতিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ,আব্দুল আজিজ,মোমিনুল,জিয়াউল ও রবিউল ইসলাম জানান,কলা চাষে কম পরিশ্রম ও স্বপ্ল সময়ে ফসল পাওয়ায় অনেকে কলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
তারা বলেন এ অঞ্চলে বর্তমানে কয়েক প্রকার কলার চাষ হচ্ছে। যেমন মেহের সাগর,দেশি সাগর,মালভোগ,এঁটে কলা ও চিনি চাম্পা কলা। তবে আবাদ হচ্ছে বেশী সাগর ও মালভোগ কলার।
কয়েক বছর থেকে কলার দাম চড়া হওয়ায় চাষিরা বেজায় খুশী।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানানো হয়, এবার উপজেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে কয়েকগুন বেশী। আর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে কলার চাষ হয়েছে ৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষি অফিস জানায় একবার যারা কলা চাষ করেছে তাদের আর চারা কিনতে হয় না। একবার চারা রোপন করলে বেশ কয়েক বছর ওই চারা দিয়ে চাষ করা যায়। প্রত্যেক ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের পরিচর্যা,বালাইনাশক প্রয়োগসহ সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে। ফলে চাষীরা যেমন ভাল ফলন পায় তেমনি ফসল নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পায়।
বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বি এস রাউফুর রাহিম জানান,কলার চাষ করতে আমরা চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে থাকি। কারণ কলা চাষে খরচ ও সময় কম লাগে। রোপনের সাত থেকে আট মাসের মধ্যে কলা বিক্রি করা যায়। এতে লাভ অনেক। আর রোগবালাই থেকে চারা রক্ষায় কৃষি বিভাগ থেকে সময় মত পরামর্শ প্রদান করা হয় তাদের।
নীলফামারী সদর উপজেলা কলা বিক্রেতা লোকমান গনি বলেন, পুরো বছর জুড়ে এবার কলার দাম বেশি। আমি এক হালি মালভোগ কলা বিক্রি করে আসছি ২৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। আর যদি কলা একটু মোটা ও লম্বা হয়ে থাকে তার দাম ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা হয়ে থাকে। একই কথা বলেন সৈয়দপুর উপজেলার চিকলী এলাকার কলা ব্যবসায়ি আতিয়ার রহমান। তিনিও ১০ বছর ধরে কলার ব্যবসা করে আসছেন। গত দুই বছর থেকে তারা ভাল দাম পাচ্ছেন কলার।