অব্যহত ভাঙনে দাকোপের বৃহস্পতি বাজার বিলীন হয়েছে নদী গর্ভে। চলমান বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের রশি টানাটানিতে এলাকাবাসীর জানমাল ঝুকির মুখে। ত্রান চায়না, যে কোন মূল্যে ভাঙন রোধে কার্যক্রর ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক এমন দাবী এলাকাবাসীর।
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মানের কাজ শেষের পথে এমন সময় অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকে কালাবগী বৃহস্পতি বাজার এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন। অব্যহত সেই ভাঙনে ৩ বছরের ব্যবধানে পুরো বাজারটাই এখন সুতারখালী নদীর মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। যে কারণে বাজারের স্থায়ী ব্যবসায়ীদের টাকার অংকে স্থাপনা বিলীনের ক্ষতির পরিমান আনুমানিক ২০ লক্ষাধীক। কেবল বাজার এলাকা নয়। কালাবগী ৯ নং ওয়ার্ডের আনুমানিক ৬০ ভাগ ভূমি এখন নদী গর্ভে চলে গেছে। সেখানকার পন্ডিতচন্দ্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৩ দফা স্থানান্তরের পর ফের ভাঙনের হুমকির মুখে। কালাবগী বনবিভাগের অফিসের বিপরীত পাড় পরিনত হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী শতাধীক পরিবারের নেই শিক্ষা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামান্যতম সুযোগ। কোমলমতি শিশুদের কথা ভেবে সামাজিক সংগঠন “শিশুদের জন্য আমরা” নিজ উদ্যোগে সেখানে আমাদের স্কুল নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেছে। তবে আর্থিক সংকট আর সংস্কারের অভাবে সেটিও এখন নিভু নিভু অবস্থায়। ধারাবাহিক ভাঙনে সব হারা মানুষদের সহায়তা বলতে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ধারাবাহিকভাবে সরেজমিন পরিদর্শন আর আশ্বাস ছাড়া এ পর্যন্ত কোন কার্যক্রর সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এখন প্রতিদিন প্রতিনিয়ত অব্যহত আছে সেখানকার ভাঙন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের উত্তর পাশ হতে পন্ডিত চন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়িয়ে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার এলাকায় অব্যহত আছে ভয়াবহ ভাঙন। পরিস্থিতি এমনই পুরো কালাবগী গ্রামটাই হতে যাচ্ছে পাশ্ববর্তী নদীর অংশ। বাজারের স্থায়ী ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ গাইন, আসাদুজ্জামান মিন্টু গাজী, অধর চন্দ্র বাওয়ালী, শফিকুল সানা, জাহিদ সানা, নজু সরদার, আমজাদ গাজী, খালেক সানা, ফারুক সানা, সাইফুল সরদার, রমেশ দাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কয়েকদফা নদী ভাঙনে চলে গেছে। একই সাথে বাজারের পাশে থাকা ঠাকুর দাস, গুরুদাস মন্ডল ও আয়না বেগমের বসতভিটে সমুদয় মালামালসহ ভাঙনে চলে গেছে। বাজারের পাশের জোহরা খাতুন মাদ্রাসা ও রাসেল স্মৃতি সংসদ নদী গর্ভে। বাজার মসজিদের বাথরুমের অংশ নদীর মাঝে আর বারান্দা ছুই ছুই অবস্থায় আছে। এ ব্যাপারে পৃথক পৃথক ভাবে কথা হয় সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সেখানে বেড়ীবাঁধ নির্মানে কর্মরত বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের প্রকৌশলীদের সাথে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ওই পোল্ডারটি বর্তমানে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের আওতায় বাঁধ নির্মান চলছে। তারা কাজ শেষে দায়িত্ব হস্তান্তর না করা পর্যন্ত আমাদের সেখানে কিছু করার সুযোগ নেই। অপরদিকে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা বলছেন, আমরা পূর্বের অনুমোদিত ডিজাইনে বাঁধ নির্মান এবং ভাঙনরোধে ডাম্পিং বা ব্লক ব্যবহার করছি। কিন্তু উল্লিখিত স্থানে ভাঙনরোধের কোন প্রকল্প আমাদের অনুমোদিত ডিজাইনে না থাকায় সেখানে কেবল বাঁধ নির্মান ছাড়া অন্য কিছু করনীয় নেই। অর্থাৎ দু’পক্ষের থাকা না থাকার আইনি জটিলতায় এলাকাবাসীর ঘরবাড়ী সহায় সম্পদ শতভাগ ঝুকির মুখে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিমাই মন্ডল বলেন, যে কোন মূল্যে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করতে না পারলে পুরো অচীরেই ওয়ার্ডটি নদীর মাঝে বিলীন হয়ে যাবে। এই মুহুর্তে সেখানে ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি ব্লক ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব এমন মন্তব্য ভুক্তভোগীদের। এলাকাবাসী বলছেন, “আমরা ত্রান চাইনা, বাঁচার তাগিদে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা চাই”।