জনবল কাঠামো ও নিয়োগবিধি বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে সোমবার ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশব্যাপী অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের অংশ হিসেবে খুলনার দাকোপেও চলছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি।
জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঠিক পদমর্যাদা না থাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঠিক লক্ষ্যে বাংলাদেশ এখনো পৌঁছাতে পারেনি। তাই দেশের যেকোনো কঠিন দুর্যোগ মোকাবিলায় জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ এর আলোকে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো ও নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) পদের আপগ্রেডেশন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পদ আপগ্রেডেশন, সচিবালয়ের ন্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সব শূন্যপদ/পদোন্নতি/চলতি দায়িত্ব নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের এ পাঁচটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে ওই অধিদপ্তরের সংযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ গত ৮/১০ বছর ধরেই সুশৃঙ্খল আন্দোলন করে আসছে।
এ পরিষদ ওই অধিদপ্তরের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা সভা, স্মারকলিপি প্রদান, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ইত্যাদিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব দাবির যৌক্তিকত পর্যালোচনায় কর্তৃপক্ষ মৌখিক ঐকমত্য প্রকাশ করলেও বাস্তবায়নের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পরীলক্ষিত না হওয়ায় এ অধিদপ্তরের সংযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ কার্যকর হয়েছে প্রায় এক যুগ আগে। অথচ এর আওতায় কর্মরত জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের (পিআইও) জনবলকাঠামো ও নিয়োগবিধি এখনো অনুমোদন হয়নি। পদ দুটির আপগ্রেডেশন প্রস্তাবও পড়ে আছে মন্ত্রণালয়ে। ফলে ডিআরআরও- পিআইওরা কাঙ্খিত আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না। আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে দাকোপ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আবদুল কাদের বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের অধীন পদগুলো যুগোপযোগী করে আপগ্রেডেশন করা হলেও তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ মন্ত্রণালয়ের অধীন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারীদের পদ অদ্যাবধি আপগ্রেডেশন করা হয়নি। এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এর আলোকে জনবল কাঠামো এবং নিয়োগবিধি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সূচনালগ্ন হতে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ সালে পাশ হওয়ার ১০ বছর অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও ওই আইনের আওতায় প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি ও জনবল কাঠামো অদ্যাবধি অনুমোদন না হওয়ার ফলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদ আপগ্রেডেশন ও নতুন প্রায় চার হাজারের অধিক পদ সৃষ্ট না হওয়া ছাড়াও ৪১৬টি বিভিন্ন পদ শূন্য থাকায় অধিদপ্তর এবং মাঠ পর্যায়ের কাজ কর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফলে এ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মনে চরম হতাশা বিরাজ করছে যা আগামীর যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বড় অন্তরায়। বন্যা, জ¦লোচ্ছ্াস, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পসহ দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে, মানবিক সহায়তা ত্রাণ বিতরণে যারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা হচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। কিন্তু দুঃখের বিষয় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ২০২২ সালেও অবহেলিত ও বঞ্চিত।