দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বারাকপুর ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন। তিনি ছিলেন দিঘলিয়া উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র নৌকা প্রতীকের বিজয়ী চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কা-ারীও তাঁকে বলা যায়। আজ হতে ৪২ দিন আগে গত ২ আগস্ট দিবাগত রাতে এই নেতার ঢাকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। গত ১২ জুন সন্ধ্যায় চিহ্নিত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। গত ১৪ জুন গাজী জাকিরের পুত্র গাজী আরাফাত হোসেন কাইফ বাদী হয়ে দিঘলিয়া থানায় তাঁর পিতার উপর হামলা এবং হত্যার চেষ্টাসহ কয়েকটা অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। হামলার ৫০ দিনের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। গাজী জাকিরের মৃত্যুর পর পূর্বের মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হয়েছে। ওই মামলার এজাহারভুক্ত ৬ আসামি কারাগারে রয়েছে। ২ আসামি এখন পর্যন্ত গ্রেফতার এড়িয়ে পলাতক রয়েছে। এজাহারভুক্ত ২ আসামীসহ ৩ জন জামিনে রয়েছে। ৩ জনের একজন পুলিশের গ্রেফতারকৃত সন্দেহের তালিকায়। পলাতক ২ জনকে গ্রেফতারে জোর অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য গত ১২ জুন স্থানীয় আড়ুয়াঘাট থেকে মোটরসাইকেল যোগে নিজ বাড়িতে আসার পথে বোয়ালিয়ারচর নামক এলাকায় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাঁর উপর চড়াও হয়। তাঁকে লোহার রড, স্টিলের পাইপ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে সারা শরীরে আঘাত করে। সন্ত্রাসীরা তাঁর দুই হাত ও দুই পা ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। তাঁকে মৃত্যু জেনে পার্শ্ববর্তী খালের মধ্যে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে গাজী জাকির হোসেনের উপর হামলার পর থেকে দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিকবার দিঘলিয়া ও খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। সারা দিঘলিয়ায় জাকির গাজীর হত্যাকারীদের ফাঁসী দাবীতে প্যানা, ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানো হয়েছে। সকল কর্মসূচিতে গাজী জাকির হোসেনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসীর দাবী জানিয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় দিঘলিয়া থানার এসআই ও গাজী জাকির হোসেন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রানা প্রতাবের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, মামলার এজাহাভুক্ত ৬ আসামি কারাগারে, ২ আসামি জামিনে ও ২ আসামি পলাতক রয়েছে। পলাতক ২ আসামীসহ অজ্ঞাতদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্যে জোর অভিযান অব্যাহত আছে। এ পর্যম্ত ১০/১২ জনের স্বাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আসামীদের রিমান্ডে হত্যার ব্যাপারে কোনো স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধী দিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়নি। তবে আসামীদের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় গাজী জাকির হোসেনের ভাই গাজী নাসিরের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, গাজী জাকির হোসেনের সন্তানের বয়স কম হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে গাজী জাকিরের ভাই গাজী জাহাঙ্গীরের প্ত্রু গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেলকে নির্বাচনে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বারাকপুরে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বিশাল কর্মী সভায় খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। গাজী বংশের প্রদীপ তরুন যুবলীগ নেতা ও সাবেক জাতীয় দলের খেলোয়াড় সাহাগীর হোসেন পাভেলকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করার জন্য মরহুম গাজী জাকিরের স্ত্রী এমপির হাতে তুলে দেন। এই সংবাদ পাওয়ার পর আমার ভাইয়ের হত্যাকারী জেল থেকে জামিনে এসে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং পরোক্ষভাবে হুমকি ধামকি অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরো জানান, পলাতক আসামিরা এলাকায় গোপনে আসছে। তাদের লোকজন মোবাইল নিয়ে রাস্তায় টহল দেয়। পুলিশ এলাকায় যাওয়ার সাথে সাথে তাঁরা মাঠের দিকে চলে যায়। দিঘলিয়া থানা পুলিশ পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জন্য তৎপর রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।