খুলনার রূপসা আঠারো বেকী নদীর পানির তীব্র চাপে হুমকির মূখে নৈহাটীর শ্রীরামপুর বিলের বেড়িবাঁধ। এ নিয়ে দুঃচিন্তার শেষ নেই ওই বিলের উপর নির্ভরশীল দু’শতাধীক কৃষক। যে কোন মুহুর্তে বিলের তিন’শ একর জমির রোপা আমন বাঁধ ভেঙ্গে বিলিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দীর্ঘ দিন ধরে বেঁড়িবাধের চলমান সমস্যা নিরসনে প্রাথমিকভাবে প্রচেষ্টা করলেও স্থায়ী সমাধানে কর্তৃপক্ষের নেই কোন উদ্যোগ। এমন অভিযোগ ওই বিলের কৃষকসহ গ্রামবাসীর। তবে টেকসই বাঁধ নির্মাণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাছনিম।
উপজেলার নন্দনপুর ও শ্রীরামপুর গ্রামের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত আঠারোবাকী নদী। এর এক প্রান্তে রয়েছে তিনশ একর নিয়ে শ্রীরামপুর বিল। আর অপরপ্রান্তে রয়েছে সারি সারি ইটের ভাটা। এই ভাঁটা মালিকরা তাদের জায়গা বাড়ানোর জন্য ইট-পাটকেল ফেলে নদীর মূল গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়। ফলে নদীর ¯্রােতধারা এসে আঘাত হানে শ্রীরামপুর বিলের বেড়িবাঁধে। এতে প্রতি বছর দেখা দেয় ভাঙ্গন। তবে চলতি বছর ভাঙ্গন মারাত্মক আকারে দেখা দিয়েছে। গত কায়েক মাস আগে উপজেলা প্রশাসন নদীর অপরপ্রান্তের ইটভাটা থেকে ইটের আধলা ট্রলারে করে এনে শ্রীরামপুর বিলের বেড়িবাঁধের পাশে দেয়। তাতে খুব একটা কাজে না আসায় খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মূর্শেদীর নির্দেশনায় বেড়িবাঁধ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন ৫লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দের ওই টাকা দিয়ে ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর বেড়িবাঁধে ফেলা হয় ৬৫০ জিও ব্যাগ। এতেও সুফল আসেনি। বরং দিন দিন বাঁধের ভাঙ্গন বাড়ছে। ১২ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বেড়ির প্রায় ৫০০ মিটার জুড়ে বিশাল ফাটল ধরেছে। জোয়ারের পানির তোড়ে যেকোন মূহুর্তে বাঁধটি নদী গর্ভে বিলিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষকরা।
শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই বিলের কৃষক মোঃ মোসলেম শেখ বলেন, এই বিলের ফসল আমাদের জীবন-জিবিকার একমাত্র অবলম্বন। পানির চাপে বেড়িবাঁধে যেভাবে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তা নিয়ে আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি। বাঁধ ভেঙ্গে বিল প্লাবিত হলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
কৃষক জিয়াউল হাওলাদার বলেন, বেড়িবাঁধ নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে আসছি। সমস্যা হলে অনেকেই ছুটে আসে। আশ^াসও দেয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না।
কৃষক কালু দেব বলেন, বিল রক্ষা বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। যেকোন মূহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে বিল তলিয়ে ফসল নষ্ট হতে পারে। আর এই বিল তলিয়ে গেলে আমাদের পথে বসতে হবে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বর মোঃ আসাবুর রহমান মোড়ল বলেন, বেড়িবাঁধ রক্ষায় ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ থেকে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ভাঙ্গন রোধে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে যে সমস্যা তা স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে অনেক টাকার দরকার। বিশেষ করে নদীর অপরপ্রান্তে নদী দখল করে যে সব ইটের ভাঁটা গড়ে উঠেছে ওই স্থানে নদী খনন করে নদীর পূর্বের গতিপথে ¯্রােতধারা ফেরানো দরকার। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তানা হলে যতই অর্থ বরাদ্দ করা হোক না কেন স্থায়ী সমাধান হবেনা।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাছনিম বলেন, শ্রীরামপুরের বিল রক্ষা বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে বাঁধের পাশে জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন টেকসই বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে খুলনা-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মূর্শেদী পানি উন্নয়নবোর্ডকে ডিও লেটার দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই ডিও লেটারের আলোকে মন্ত্রনালয়ে বরাদ্দ চেয়েছে। এমনকি ১৩ সেপ্টেম্বর বৃষ্টির মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দ পেলে সকল সমস্যার সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ।