রংপুরের পীরগঞ্জে উপজেলার আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের জন্মস্থান বহাল রাখতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। যে কোনো ধরনের প্রতিকুল অবস্থার মোকাবেলা করার জন্য সকলেই জোটবদ্ধ হয়েছে। মামলা,হামলা ও হয়রানি থেকে বাঁচতে চায় তারা। উপজেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত শুক্রবার বিকালে জয়পুরহাট জেলার জিল্লুর রহমান কয়েকজন লোক নিয়ে বড় আলমপুর ইউনিয়নের পাট উজিরপুরে জমির দখল নিতে আসে। খবর পেয়ে পীরগঞ্জ থানার ওসি ঘটনা স্থলে যান। দু’দলকেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। স্থানীয় লোকজন বলছেন,দেশ স্বাধীনের আগে সূর্য সেন নামে এক জমিদার প্রজাদের হাতে জমাজমি ছেড়ে দিয়ে ভারতে বিদেশে চলে যান। সেই সময়ের প্রজা মুসলিম, হিন্দু ও আদিবাসীসহ প্রায় ৫’শ পরিবার ১’শ একর জমিতে বাড়ি ঘর এবং মাঠের কৃষি জমি ভোগদখল ও আবাদ করে আসছে। জমিদার এলাকায় না থাকার সুযোগে পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার দারাজ আলী নামের এক তহশিলদার পীরগঞ্জ তহশিল অফিসে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় তিনি জয়পুরহাট জেলার জিল্লুর রহমান নামের এক ব্যক্তির কে অবৈধভাবে কাগজপত্র বানিয়ে দেন। এরপর থেকে জিল্লুর রহমান দখলকারীদের কে উচ্ছেদ করতে মাঝে মধ্যেই মহড়া চালায়। অপর দিকে বন বিভাগের লোকজন তাদের জমি দাবি করে আদালতে উচ্ছেদ মামলা রুজু করে। এতে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারকে একাধিক মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে এসব পরিবার নানা প্রতিকুলতায়,ঘাত প্রতিঘাতে আজ ভয় কেটে গেছে। এখন তারা একত্র হয়ে যে কোনো ধরনের দাঙ্গা হাঙ্গামার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পাট উজিরপুর গ্রামের আবদুর রহিম বলেন, প্রায় দেড়’শ বছর থেকে তাদের প্রজন্ম এই জমিতে বসবাস করে আসছে। তারাও একই ভাবে থাকতে এখানেই বাকী জীবন কেটে দিতে চান। এদের প্রত্যাশা পরবর্তী প্রজন্মও যেন এভাবেই এখানেই বসবাস করতে পারেন। পরেশ বলেন-“জয়পুরহাট জেলার জিল্লুর রহমান তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলছে বারবার। একবিন্দু রক্ত থাকতেও আমরা চলে যেতে রাজি নই”। সদার মরমু বলেন, যত বিপদ আসুক তারা জীবন যুদ্ধের হাল ছাড়ছেন না। তাদের ঐতিহ্যবাহী তীর-ধনুক দিয়ে শত্রুদের সাথে মোকাবেলা করবেন। তিনি আরও বলেন-বন ও জিল্লুর রহমানের দায়েরকৃত একাধিক মামলায় তাদের সংসার পরিচালনা করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে। মামলা ও হয়রানি থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে চায় তারা। জিল্লুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, অনেকগুলো জমি এক সাথে কিনেছেন। দখল নিতে আইনের আশ্রয় নিলে মহামান্য আদালত তার পক্ষে রায় প্রদান করেন। যে কারণে তিনি জমি দখলে নিতে এসেছেন। পীরগঞ্জ থানার অফিস ইনচার্জ আবদুল আউয়াল বলেন, আদালতে রায় পেয়ে থাকলে বিধি মোতাবেক যদি তিনি পুলিশের স্মরনাপন্ন হন তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।