নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ভারতের মেঘালয় সীমান্ত লেঙ্গুড়া, খারনৈ, রংছাতি এই তিন ইউনিয়ন সীমান্তে চোরাচালানের বাণিজ্য বন্দর যেন গড়ে উঠেছে। যদি কোন এক খবরের পাতায় প্রকাশিত হয় কোন এক সচিত্র প্রতিবেদন তবে প্রশাসন একটু নড়ে চড়ে বসে,
তৎপর অভিযানে দু 'একটা চোরাচালান জব্দ করে, তারপর আধাআধি বখরাতে সবকিছু হাপিস হয়ে যায়!
এভাবেই আরো বেড়ে যাচ্ছে চোরাচালান বৃদ্ধি! কিন্তু এতেই কি যতেষ্ট?
পুলিশ প্রশাসন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন সীমান্ত পিলার পয়েন্ট ১১৭০ ভরতপুর, ১১৭১ কালোপানি, তকলেট বাড়ি, পাচঁ লেঙ্গুড়া, পুর্বে ১১৭২ সাত শহীদ মাজার, কাঠালবাড়ী, জগনাথপুর, চেংনী, কচুগড়া,গোবিন্দপুর, উত্তর গোড়াগাও, পাতলাবন,সন্ন্যাসী পাড়া,বেতগড়া, বরুয়াকোনা, পাঁচগাও সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা, রাত ২টা থেকে ভোর ৫টা অবধি চোরাকারবারীরা চোরাচালান এপার থেকে ওপারে আনা নেয়া করে থাকে।
সীমান্ত এলাকার লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, এসব মালামাল পাথর-বালুর ভেতর দিয়ে, দূর পাল্লা বাসে ও সীমান্ত চরা দিয়ে চোরাচালান কারীরা রাতের বেলায় পরিবহন করে থাকে। এসব মালামালের ধরন- ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ, চাইনিস পিস্তল, মেশিনারিজ সরংঞ্জাম, (মটর সাইকেল স্কুটি) বিভিন্ন মডেলের মোবাইল, ব্যান্ডের শাড়ী লেহেঙ্গা, কম্বল, কসমেটিক, সুপারী, গরু, চা, চিনি, সাবান-সেম্পু তেল, তেজ পাতা ইত্যাদি।
এসব চোরাচালান পাচারকালে চোরাইকারবারীদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হল এই অকিটকি। জানা যায়, এই অকিটকিতে দু'সীমান্তের চোরাইকারবারীরা পাহাড়ের আনাচে কানাচে বসে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। কোন কোন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসব চোরাচালান পাচার করলে সহজ হবে, কেবল তারাই শুধু জানতে পারবে, অন্য কেউ নয়। এই অকিটকিই এখন তাদের কাছে একমাত্র চোরাচালান বাণিজ্য উৎসবের মাধ্যম।
আর এই চোরাচালানকারীদের গডফাদার (মাহাজন) হলেন, লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের কালোপানি এলাকার রাবার্ট নখরেক! তারই বড় ছেলে সুজয় মান্দা ওপার থেকে এপারে এসব মালামাল সাপ্লাই করে থাকে, মাহাজন রবার্ট নখরেক সেই চোরাচালান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে। তাদের সাথে আরো সমন্বয়কারীরা হল, লেঙ্গুড়া ইউপি'র ফুলবাড়িয়া এলাকার ভূবন নখরেক( গরু জমাদার)মজিদ, গফুর, কান্দাপাড়া-নাজমুল, শান্ত, মাজারুল। ওরা ভারতের সীমান্ত মাকবুল জোড়া (ওপার সীমান্তের ফায়ারের)বাড়ী রাস্তা দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত গনেশ্বরী নদী দিয়ে চোরাচালান আনা নেয়া করে। অপরদিকে বার্মা বর্ডার হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নেত্রকোনার কলমাকান্দা লেঙ্গুড়া কালোপানি চরা হয়ে ইন্ডিয়া প্রবেশ করে এই চোরাচালান।
উল্লেখ্য যে, গত ২৯ শে আগস্ট তারিখে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় সীমান্ত চোরাচালান বাণিজ্য নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তারই আলোকে প্রশাসন একটু নড়েচরে বসে। কিন্তু এতেই কি যতেষ্ট? ক'দিন যেতে না যেতেই আবার সেই চোরাকারবারীরা জেগে ওঠে, সীমান্তের ভিন্ন ভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এসব চোরাচালান আনা নেয়া করে। গত ২৮ শে আগস্ট তারিখে এসব চোরাচালান পাচারকালে ভারতের সীমান্তের সিআইডির হাতে জব্দ হয়। জব্দকৃত মালামাল জোরপূর্বক চিনিয়ে নিতে গিয়ে সিআইডিকে মাথায় আঘাত করে চোরাচালানকারীরা। আহত সিআইডিকে তাৎক্ষনিক উদ্ধার করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এই ঘটনায় দু'সীমান্তের চোরাইকারবারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় ভারতে। প্রাণনাশের ভয়ে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করতে অনেক গণমাধ্যমকর্মীরা এরিয়ে যান।
স্থানীয় সুত্রে আরো জানা যায়, এইসব চোরাচালানি কাজে সরাসরি সহায়তা করছে বিজিবি ও বিএসএফ কর্তৃক লাইনম্যানরা, এমন তথ্য স্থানীয়দের কাছে দিবালোক। তবে লাইনম্যান ব্যতীত অন্য কোন মাধ্যমে অবৈধ মালামাল নিয়ে প্রবেশ করলে বিজিবি কাছে ধরিয়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছে চোরাচালানে জড়িত অনেকেই।
স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া এমন তথ্যের ভিত্তিতে পাঁচগাও বিওপি কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, লেঙ্গুড়া বিওপি কমান্ডা ও খারনৈ বিওপি কমান্ডার জানান, তারা নিয়মিত সীমান্তে টহল দিচ্ছেন, অবৈধ মালামাল পেলে আটক করছেন।এ সকল বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভালো জানেন। তাদের অনুমতি ছাড়া অন্য কিছু বলা সম্ভব নয়।