ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে বাংলার প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে। সবুজ পাতায় ছেয়ে যায় বৃক্ষরাজি। বিশেষ করে বর্ষাকালে জলজ উদ্ভিদ প্রাণ ফিরে পায়। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী রামশীল ইউনিয়নের উত্তর জহরেরকান্দি ও মুশরীয়ার বিলের। শাপলা ফুল না ফুটলেও হাজার হাজার পদ্মফুল ফুটেছে বিলটিতে। সারি সারি পদ্মফুলের সৌন্দর্য বিনোদন প্রেমীদের মুগ্ধ করছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে প্রতিদিন শত শত ফুল ছিঁড়ে নিয়ে বিলটির সৌন্দর্য নষ্ট করছেন অনেকেই। বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে। আর এ কারণে এখন এ বিলটি পদ্মবিল নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। এই বিলটির আগাছা তুলে সরকারি ভাবে সংরক্ষনের দাবি স্থানীদের।
স্থানীয়রা জানায়, শাপলা, শালুক, কচুরিপানা আর পদ্মফুলে সজ্জিত হয় খাল-নদী আর বিল। এবছর নদী-নালা ও খাল-বিলে পানি কম থাকায় শাপলা, শালুক ও কচুরিপানা নেই বললেই চলে।
সৌন্দর্য পিপাসুদের কাছে এই পদ্মবিল হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থান। বিকেল হলেই ভিড় করতে থাকেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। নৌকায় ঘুরে বেড়ান বিলজুড়ে, পদ্মের সঙ্গে ছবি তোলেন। আগে এই বিলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌকা চলাচলের সুযোগ ছিলো না। এখন সৌন্দর্য পিপাসুদের ভিড় হওয়াতে স্থানীয়রা নৌকা ক্রয়করে ঘুরিয়ে কিছু বাড়তি আয়ও করছেন। স্থানীয়দের জীবিকার মাধ্যমও হয়ে উঠতে শুরু করেছে এই পদ্মবিলে। অনেকেই পদ্ম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই পদ্ম চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতেও।
নৌকা চালক অমল জয়ধর বলেন, বর্ষা মৌসুমে কোনও কাজ থাকে না। তাই পদ্মবিলের ঘুরতে আসা মানুষদে নৌকায় চড়িয়ে কিছু টাকা আয় করি তাই দিয়ে আমার সংসার চলে। আমার মতো অনেকেইে নৌকায় দিয়ে আয়ের পথ পেয়েছে। আবার অনেকে পদ্ম ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। নৌকায় করে পর্যটকদের পদ্মবিলে নিয়ে বাড়তি টাকা আয় হচ্ছে।
ললিতা সরকার বৃষ্টি বলেন, পদ্মফুল আমার একটি প্রিয় ফুল। পদ্মফুল দিয়ে সাজতে আমার খুবই ভালো লাগে। আমি প্রতিবছর এই পদ্মফুল এর বিলে ঘুরতে আসি। বিলটির আগাছা তুলে সরকারি ভাবে যদি সংরক্ষন কর হতো তা হলে আরো সুন্দর লাগতো।
পদ্মবিলে ঘুরতে আসা আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য তেমন কোনও পর্যটন কেন্দ্র নেই। তাই উত্তর জহরেরকান্দি বিলসহ বিভিন্ন বিলে পদ্মফুল ও লাল শাপলা পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। তাই এত সুন্দর পদ্মবিলের দিগন্ত জোড়া পদ্মফুল দেখে যে কেউ আনন্দ উপভোগ করবে। প্রতিবছরই প্রকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এখানকার পদ্মফুল দর্শনার্থীদের হাতছানি দেয়। তারা নৌকায় ঘুরে পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে। পুরো বিল গোলাপী আর সাদা রঙের পদ্ম ভরে ওঠে। এ যেন বিধাতার এক অপরূপ সৃষ্টি যা দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। যে যার মতো করে পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন আর ক্যামেরার ফ্রেম বন্দি করে রাখছেন এ বিলের অপরূপ সৌন্দর্য।
পদ্মবিলে ঘুরতে আসা মোহাম্মদ আলম, মো. নজরুল ইসলাম, দোলন চন্দ্র রায়, ডা.মনিরুজ্জামান তরফদার, মো. কামরুজ্জামান, মো. মোশররফ হোসেন জানান, প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক এই পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন। আমরারও নৌকায় করে বিলটা ঘুরলাম। রাশি রাশি পদ্মফুল বিলটাকে পুরো ছেয়ে গেছে। এমন সৌন্দর্য দেখার জন্য সবাইকে অন্তত একবার হলেও এ বিলে আসা উচিত।