মানুষ ও লেজহীন বানরের মধ্যে পরিবারগত জোরালো সাদৃশ্য থাকলেও আমরা কিন্তু লেজহীন বানরের বংশধর নই। প্রায় এক কোটি বিশ লাখ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ ছিল এক। সে সময় আমাদের পূর্বপুরুষদের যে শাখাটি বৃক্ষের আশ্রয় ছেড়ে ভূমিবাসী হয় আমরা তাদের উত্তরসূরি।
প্রাচীন প্রায়-মানুষের যে চিহ্ন পাওয়া গেছে তারা অস্ট্রালোপিথেকাস নামে পরিচিত। আফ্রিকায় এদের মাথার খুলি ও বহু হাড়গোড় পাওয়া গেছে। তারা দু পায়ে হাঁটত এবং পাথরের টুকরা দিয়ে সাদামাটা অস্ত্রও তৈরি করত। তাদের মগজ ছিল খুবই ছোট আকারের। সেজন্য আমরা তাদের সত্যিকার মানুষ বলি না; বলি প্রায়-মানব। “হোমো” বর্গে প্রায় ২০ লাখ বছর আগে প্রকৃত মনুষ্য প্রজাতির উদ্ভব ঘটে এবং মনে করা হয় সে সময় তারা অস্ট্রালোপিথেকাসদের শেষ বংশধরদের পাশাপাশিই থাকত।
আদি মানুষের সবচেয়ে অগ্রসর অংশটি পরিচিত হোমমা ইরেক্টাস হিসাবে। তাদের নির্দশন পাওয়া গেছে আফ্রিকা ও এশিয়ায়। তারা রান্না ও শীত নিবারণের জন্য আগুন জ্বালাতে পারত এবং এই আগুন দিয়েই বন্যপ্রাণী তাড়াত। এর অর্থ হচ্ছে সে সময় তারা ইউরোপে যাওয়ার মতো সামর্থ্য অর্জন করেছিল। কারণ তখন ইউরোপ ছিল তুষারাচ্ছন্ন ও শীতপ্রধান এলাকা।
হোমো বর্গের আরেকটি প্রাগ্রসর অংশ বা প্রজাতি হচ্ছে হোমমা স্যাপিয়েনস। তাদের উদ্ভব দু লাখ বছর আগে। এদেরই একটি টাইপ নিয়ান্ডারথাল মানব প্রচণ্ড শীত সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করেছিল বলেই উত্তর ইউরোপে বাস করতে পেরেছিল। সুযোগ পেলে তারা গুহায় বাস করত। তারা পাথরের নানা ধরনের অস্ত্র আবিষ্কার করেছিল। কেউ মারা গেলে তারা তাকে সমাধিস্থ করত- যা ছিল একটি মানবিক কাজ। ইউরোপে তারা ত্রিশ হাজার বছর আগেও টিকে ছিল।
হোমে স্যাপিয়েনস স্যাপিয়েনস প্রজাতির যে মানুষ আজ ইউরোপে বাস করে তারা সম্ভবত এসেছিল নিকট প্রাচ্য থেকে। আদি মানবদের মধ্যে ক্রো-ম্যানিয়রা আবার যে সব পশুশিকার করত সেগুলোর ছবি গুহায় একে রাখত। এসব আদি মানুষ বেঁচে থাকত শিকার ও বন্য ফলমূল সংগ্রহ করে। অস্ত্র তৈরির জন্য তারা ব্যবহার করত পাথর, হাড় অথবা কাঠ। মানুষ খিস্টপূর্ব আট হাজার বছরের আগে চাষাবাদ করতে শেখেনি।