রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার ধারে গোকুলপুর ঘাটে প্রতিদিন মাছের হাট বসে। প্রতিদিন জেলে পদ্মা নদী থেকে মাছ ধরে এই হাটে বিক্রি করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ ক্রয় করতে এই হাটে আসেন ব্যাপারিরা।
জানা যায়, মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন নদী বেষ্টিত রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে ১৫টি চর রয়েছে। এই চরে জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। উপজেলায় ২৬ কিলোমিটার এলাকা পদ্মা নদী রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ কিলোমিটার চকরাজাপুর ইউনিয়নের মধ্যে। জেলে রয়েছে ৩৭০ জন। তারা ভাঙনগ্রস্থ ও সহায়সম্বলহীন মানুষ। তারা চরে অবস্থান করে। তবে কিছুকিছু চরে স্থায়ী জনবসতি গড়ে উঠেছে। আবার কিছুকিছু চরে অস্থায়ী বসতি রয়েছে। জেলেরা সারারাত মাছ শিকার করে সকালে গোকুলপুর পদ্মা নদীর ঘাটে বিক্রি করতে আসে। এই মাছ ক্রয় করতে আসেন ঈশ্বর্দী, লালপুর, কুষ্টিয়ার ব্যাপারিরা।
দেবত্তবিনোদপুর এলাকার আবদুল কুদ্দুস বলেন, আমি প্রতিদিন ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে পদ্মার মধ্যে মাছ শিকারীর কাছে থেকে মাছ ক্রয় করে গোকুলপুর খাটে বিক্রি করি। আমি পাঁচ বছর থেকে এ পেশার সাথে জড়িত। বর্তমানে ভাল আছি। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। মেজো মিয়ে রিয়া স্থানীয় মাদ্রসায় পড়ে। ছোট ছেলে রানা স্থানীয় স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ৫ সদস্যের সংসার ভাল চলছে।
এ বিষয়ে কালিদাসখালী চরের জেলে ওয়ালিউর রহমান বলেন, আমি প্রতিদিন পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করি। সকালে গোকুলপুর পদ্মা নদীর ঘাটে বিক্রি করি। এই মাছ বিক্রি করতে কোন অসুবিধা হয় না। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারি এসে মাছ ক্রয় করে নিয়ে যায়। মাছ ধরায় আমার মুল পেশা। এই পেশাতে আমার ৬ সদস্যের সংসার চলে।
লালপুর থেকে মাছ ক্রয় করতে আসা আমিরুল ইসলাম বলেন, জেলেরা সারারাত মাছ ধরে প্রতিদিন সকালে এই ঘাটে বিক্রি করতে আসেন। এই মাছ ক্রয় করে ঈশ্বদীতে নিয়ে যায়। পদ্মা নদীর মাছের প্রচুর চাহিদা। সকাল ৭াট থেকে ৮টা পর্যন্ত চলে এই হাট। তবে এই হাট দুই ঘন্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
মাছ বিক্রি করতে আসা চৌমাদিয়া চরের জেলে জমসেদ আলী বলেন, আমি ও আমার ছেলে মিলে শুক্রবার দেড় কেজি চিংড়ি, দুই কেজি বালি, চার কেজি লাইকড়, দেড় কেজি বোয়াল মাছ ধরেছিলাম। এই মাছ গোকুলপুর পদ্মার নদীর ঘাটে বিক্রি করি।
শুক্রবার গোকুলপুর পদ্মা নদীর নতুন বাধে বেড়াতে এসেছিলেন দিঘা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক গোলাম তোফাজ্জল কবীর। তিনি ১৬০ টাকা কেজি হিসেবে সাড়ে চার কেজি লাইকড় মাছ ক্রয় করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারের চেয়ে কম দামে পেয়েছি।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান বলেন, পদ্মার চরের মধ্যে ১৫টি চর নিয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়েছে। পদ্মায় কেউ নৌকা আবার কেউ জাল নিয়ে মাছ ধরে জীবন যাবন করে।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাহাবুল ইসলাম বলেন, পদ্মার মধ্যে চরের বেশির ভাগ বাসিন্দা ভূমিহীন অসহায় খেটে খাওয়া মানুষ। তারা প্রতিনিয়ত প্রকৃতির খামখেয়ালি রূপকে বরণ করে বসবাস করে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ শুকনো মৌসুমে কৃষি কাজ আর বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তবে সকাল থেকে কোকুলপুর পদ্মা নদীর ঘাটে মাঠের হাঁস বসে।